নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর:
যশোরের কেশবপুরে প্রাইভেট কোচিং না করায় এক শিক্ষার্থীকে গ্যাংস্টাইল হামলার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষক শুধু শ্রেণিকক্ষে নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি, বরং বহিরাগত কিশোরদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
ভান্ডারখোলা সিনিয়র আলিয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র আবু জাফর (১৬), পিতা হাজী হায়দার আলী খান, অভিযোগ করেন—মাদ্রাসার গণিত শিক্ষক মোঃ আবু রায়হান (পিতা: কপিল উদ্দিন শেখ) এর কাছে কোচিং না করায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে বিভিন্ন অজুহাতে তাকে বেত্রাঘাত করে আসছেন।
ছাত্র আবু জাফর জানান, গত ৭ মে ক্লাসে পড়া না পারার অজুহাতে শিক্ষক রায়হান তাকে বেত দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। এরপর তিনি চিকিৎসার জন্য মৌখিক ছুটি চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি মঞ্জুর করলেও এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, “প্রতিষ্ঠানে থাকবে কি না, সেটা তোমার ব্যাপার”।
চিকিৎসা শেষে আবার মাদ্রাসায় যাওয়া শুরু করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। জাফরের ভাষ্য, শিক্ষক রায়হান তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ব্যাচে পড়া বাইরের কিছু কিশোরকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালান।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাফর বলেন, “১৪ মে সন্ধ্যায় বাজারে গেলে হাবিবুর ও নাইম নামে দুই যুবক আমাকে ফোন করে মাদ্রাসার মাঠে যেতে বলে। তারা জানায়, রায়হান স্যার আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। সন্দেহ হওয়ায় আমি আমার চাচাতো ভাইকে ফোনে জানিয়ে তাদের সঙ্গে মাঠে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আরও ৭-৮ জন আগে থেকেই অপেক্ষা করছে। ওরা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে, মাথায় আঘাত করে এবং বুকের উপর উঠে মারধর করে। আমি অচেতন হয়ে পড়ি।”
পরে তার ভাই আবু সুফিয়ান ঘটনাস্থলে গিয়ে জাফরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু রায়হান কোনো মন্তব্য না করে নিশ্চুপ থাকেন।
এ বিষয়ে ভান্ডারখোলা সিনিয়র আলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহাম্মদ আলী কাদের জানান, ঘটনার তদন্ত শেষে শিক্ষক আবু রায়হানকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী আবু জাফরের পরিবারের দাবি, তাদের ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে বহিরাগত কিশোরদের দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তারা ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।
ঘটনার বিষয়ে কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জানান, অভিযোগ পেয়েছেন এবং কেশবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।