আয়াতুল কুরসি হলো কুরআনের ২য় সূরা, সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হিসেবে বিবেচিত হয়। আয়াতুল কুরসি বাংলা এটি আল্লাহর অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান ও সার্বভৌমত্বের পরিচায়ক। এই আয়াত পড়ার মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর বিশেষ রহমত ও সুরক্ষা লাভ করে থাকে।
হাদিসে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফজরের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, সে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদ থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এটি কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত, যা পাঠ করলে আল্লাহ বিশেষ হেফাজত করেন।
আয়াতুল কুরসি বাংলা
বিশেষত, নামাজের পর এই আয়াত পড়লে জান্নাতে প্রবেশের একটি বড় মাধ্যম হয়ে যায়। এছাড়া, কোনো বিপদ বা দুশ্চিন্তার সময় আয়াতুল কুরসি পড়লে অন্তরে প্রশান্তি আসে এবং আল্লাহর করুণা লাভ হয়। তাই প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এই আয়াত তেলাওয়াত করা উচিত, যেন আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারি।
আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি (আল-বাকারা ২:২৫৫) –
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌۭ وَلَا نَوْمٌۭ ۚ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍۢ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ ۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যূম।
লা তা’খুজুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওম।
লাহু মা ফিস্সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ।
মান্ যাওল্লাজি ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বিইজনিহ।
ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম।
ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’।
ওসি’য়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ।
ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা।
ওয়া হুয়াল আলিয়্যুল আজিম।
(সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)

বাংলা অনুবাদ:
আল্লাহ, তিনি ছাড়া (অন্য) কোনো উপাস্য নেই; তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা প্রতিষ্ঠিত।
তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না।
আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর।
কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?
তিনি জানেন যা তাদের সামনে ও যা তাদের পেছনে রয়েছে।
তাঁর জ্ঞানের কোনো অংশ তারা আয়ত্ত করতে পারে না, তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া।
তাঁর কুরসি আকাশসমূহ ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত করে আছে,
এবং এই দু’টির সংরক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না।
তিনি মহোচ্চ, মহান।
(সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
আয়াতুল কুরসি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী আয়াত, যা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান ও কুদরতের পরিচায়ক। এটি পাঠ করলে আল্লাহর হেফাজত ও বরকত লাভ করা যায়।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত (সহীহ হাদিস অনুযায়ী)
আয়াতুল কুরসি কুরআনের সবচেয়ে মহিমান্বিত ও শক্তিশালী আয়াতগুলোর মধ্যে একটি। এটি পাঠ করলে আল্লাহর রহমত, হেফাজত ও অপার সাওয়াব লাভ করা যায়। নীচে আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে কিছু সহীহ হাদিস উল্লেখ করা হলো—
১️ আয়াতুল কুরসি কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবি উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন:
“হে আবুল মুনযির! তোমার জানা কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি?”
তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই সর্বাধিক জানেন।”
এরপর তিনি নিজেই বললেন, “আয়াতুল কুরসি”।
তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বলেন:
“অভিনন্দন হে আবুল মুনযির! তোমার এই জ্ঞানের জন্য তোমাকে বরকত দেওয়া হোক।”
(সহীহ মুসলিম: ৮১০, তিরমিজি: ২৮৭৮)
২️ আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে শয়তান দূরে থাকে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন:
তিনি বলেন, এক রাতে এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর দেওয়া যাকাতের পাহারার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার খাদ্য চুরি করল। আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ধরে ফেললে সে মুক্তির জন্য বলল—
“আমি যদি তোমাকে একটি কল্যাণকর বিষয় শিখিয়ে দিই, তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে দেবে?”
আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, “হ্যাঁ”।
সে বলল:
“তুমি যখন শুতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়ো। এটা পড়লে তোমার সাথে সারারাত এক শয়তানও আসতে পারবে না, আর সকাল পর্যন্ত আল্লাহ তোমার হেফাজত করবেন।”
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) শুনে বললেন:
“সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে মিথ্যাবাদী (কারণ সে শয়তান ছিল)।”
(সহীহ বুখারি: ২৩১১)
৩️ আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশ নিশ্চিত
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
“যে ব্যক্তি প্রতিবার ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে একমাত্র বাধা মৃত্যু।”
(নাসাঈ, হাকিম – সহীহ)
৪️ আয়াতুল কুরসি ঘুমানোর আগে পড়লে সারারাত হেফাজত হয়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
“যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তা পায়, এবং শয়তান তার কাছেও আসতে পারে না।”
(সহীহ বুখারি: ৩২৭৫)
সারসংক্ষেপ: আয়াতুল কুরসির গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত
আয়াতুল কুরসি কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত।
এটি পড়লে শয়তান ও জিন দূরে থাকে।
ফরজ নামাজের পর পড়লে জান্নাতে প্রবেশ নিশ্চিত হয়।
রাতে ঘুমানোর আগে পড়লে আল্লাহর হেফাজত লাভ হয়।
এটি ইসলামের অন্যতম শক্তিশালী রুকইয়া (ঝাড়ফুঁক) আয়াত।
আসুন, আমরা নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি এবং আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা লাভ করি।
আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব
আয়াতুল কুরসি (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৫) কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি আল্লাহর একত্ববাদ, ক্ষমতা ও সৃষ্টিজগতের ওপর তাঁর সর্বাধিক কর্তৃত্ব প্রকাশ করে। ইসলামে এটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং হাদিস অনুযায়ী এর রয়েছে অসংখ্য ফজিলত।
আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব
১️ কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“আল্লাহর কিতাবে সবচেয়ে মহিমান্বিত আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি।”
(তিরমিজি: ২৮৭৮, সহীহ মুসলিম: ৮১০)
২️ আল্লাহর একত্ব ও পরিপূর্ণ ক্ষমতার বর্ণনা
এই আয়াতে আল্লাহর চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী ও সর্বশক্তিমান সত্তার বর্ণনা রয়েছে, যা প্রতিটি মুমিনের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
৩️ সুরক্ষা ও কল্যাণ লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
আয়াতুল কুরসি শয়তান, বিপদ-আপদ ও দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যতম শক্তিশালী আয়াত।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত (সহীহ হাদিস অনুযায়ী)
১️ ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে জান্নাতে প্রবেশ নিশ্চিত
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি প্রতিবার ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশের একমাত্র বাধা হলো মৃত্যু।”
(নাসাঈ, হাকিম – সহীহ)
২️ আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে শয়তান দূরে থাকে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে শয়তানের ঘটনা:
এক রাতে এক ব্যক্তি (শয়তান) খাবার চুরি করছিল, তখন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ধরে ফেলেন। তখন সে বলল:
“আমি যদি তোমাকে এক উপকারী আমল শিখিয়ে দেই, তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে দেবে?”
আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, “হ্যাঁ”।
সে বলল:
“যখন তুমি রাতে ঘুমাতে যাবে, আয়াতুল কুরসি পড়ো। তাহলে আল্লাহ সারারাত তোমার হেফাজত করবেন এবং শয়তান তোমার কাছেও আসতে পারবে না।”
সকালে আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে ঘটনাটি বললে তিনি বললেন:
“সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে মিথ্যাবাদী (কারণ সে শয়তান ছিল)।”
(সহীহ বুখারি: ২৩১১)
৩️ রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর হেফাজত লাভ হয়
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
“যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুরক্ষা পায় এবং শয়তান তার কাছেও আসতে পারে না।”
(সহীহ বুখারি: ৩২৭৫)
৪️আয়াতুল কুরসি মানুষের জন্য নিরাপত্তা ও ঝাড়ফুঁকের শ্রেষ্ঠ আয়াত
হজরত রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
“যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে দিন ও রাতে কোনো ক্ষতি হবে না।”
(নাসাঈ: ১০৭৭, তিরমিজি: ২৮৮০ – সহীহ হাদিস)
আয়াতুল কুরসি কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত, যা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিচায়ক। হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফজরের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে এটি পাঠ করে, সে শয়তান ও অকল্যাণ থেকে সুরক্ষিত থাকে। নামাজের পর পড়লে জান্নাতে প্রবেশের পথ সহজ হয়। বিপদ-মুসিবতে আয়াতুল কুরসি পড়লে অন্তরে শান্তি আসে এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এটি শুধু দোয়া নয়, বরং নিরাপত্তার ঢাল। তাই প্রতিদিন এই আয়াত পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করা যায়।