আসল নাম জন প্রকাশ রাও জানুমালা। তবে তিনি সমগ্র ভারত ও বলিউডপ্রেমীদের কাছে পরিচিত জনি লিভার নামে একজন কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা। পর্দায় হাসির ঝরনা বইয়ে দেওয়া এই মানুষটির জীবন শুরু হয়েছিল একেবারেই ভিন্ন পথে। তাঁর জীবনপ্রবাহে যেমন কষ্ট ছিল, তেমনি ছিল আশ্চর্য প্রতিভার উন্মেষ।
জনি লিভারের পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। সপ্তম শ্রেণিতে থাকতেই স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। কারণ—অভাব। মদে আসক্ত বাবার সংসারে টিকে থাকতে গিয়ে পড়াশোনার চেয়ে জীবিকার খোঁজটাই হয়ে উঠেছিল অগ্রাধিকার। ছোট বয়সেই তার জীবনের ভার নিতে হয়েছিল নিজের কাঁধে।
এক সাক্ষাৎকারে জনি বলেন, “আমার বাবা মদ্যপ ছিলেন, আমাদের কোনো খেয়াল রাখতেন না। বড় জ্যেঠু সাহায্য করতেন বটে, তবে সেটা টিকিয়ে রাখার মতো যথেষ্ট ছিল না। আমি বিরক্ত হয়ে স্কুল ছেড়ে দিই।” বাবার অবহেলা আর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন মিলিয়ে স্কুলজীবন ছিল ক্ষণস্থায়ী এক অধ্যায়।
তবু স্কুলে পেয়েছিলেন অসীম ভালোবাসা। ক্লাস শিক্ষিকা দময়ন্তী তাঁর খোঁজ নিতেন, বেতন আর জামাকাপড় দিতে চেয়েছিলেন যাতে সে আবার স্কুলে ফিরে আসে। আজও জনির সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। দময়ন্তীর মতো শিক্ষকের ভালোবাসা আজীবন স্মৃতির পাতায় গেঁথে আছে জনির মনে।
স্কুল ছেড়ে জনি পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। সেখানেই জীবনযুদ্ধের শুরু। রাস্তায় কলম বিক্রি করে হকারি করতেন, আর তারকাদের নকল করে মানুষকে আনন্দ দিতেন। কঠোর পরিশ্রম আর প্রতিভার মিশেলে ধীরে ধীরে নিজের স্বকীয়তা গড়ে তুলছিলেন তিনি। ঠিক এই প্রতিভার জন্যই একদিন হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের এক অনুষ্ঠানে নজরে পড়েন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। সেখান থেকেই শুরু তার অভিনয়জীবনের যাত্রা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথমবার সবার হাসির কারণ হয়ে ওঠার সেই মুহূর্তটি আজও ভোলেন না জনি।
এর পরের গল্পটা ইতিহাস। অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। ‘বাজিগর’, ‘দিওয়ানা মাস্তানা’, ‘দুলহে রাজা’র মতো ছবিতে তার অভিনয় আজও দর্শকের মনে হাসির ঝাঁপি খুলে দেয়। তার সন্তানরাও হাঁটছে বাবার দেখানো পথে। মেয়ে জেমি লিভার ২০১৯ সালের ‘হাউসফুল-২’ সিনেমায় বাবার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। ছেলেও শোবিজ দুনিয়ায় নিজের অবস্থান গড়ার চেষ্টা করছে। নতুন প্রজন্মের চোখে জনি শুধু একজন অভিনেতা নন, বরং এক অনুপ্রেরণা।
জনির জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রতিভা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে মুম্বাইয়ের রাস্তাও হতে পারে বলিউডের মঞ্চে পৌঁছানোর সিঁড়ি। সংগ্রাম, সাহস আর আত্মবিশ্বাস মিলেই তৈরি হয় এমন সফল জীবনের গল্প, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যায় অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে।