আয়াতুল কুরসির ফজিলত, আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। এটি সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যেখানে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান ও সার্বভৌমত্বের বর্ণনা রয়েছে। ইসলামে এটি এতটাই মর্যাদাপূর্ণ যে, একে কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াত বলা হয়। এই আয়াত তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা লাভ করা যায়।
আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব ও ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ও রাতে আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকে। এছাড়া, নামাজের পর নিয়মিত এ আয়াত পড়লে জান্নাতে প্রবেশের পথ সহজ হয়। হাদিসে আরও এসেছে, যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে সারারাত আল্লাহর হেফাজতে থাকে।
এটি শুধু নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং মানসিক প্রশান্তি লাভেরও অন্যতম উপায়। দুশ্চিন্তা, ভয় ও অশান্তি দূর করতে আয়াতুল কুরসি অত্যন্ত কার্যকরী। যেকোনো বিপদ-মুসিবতে এই আয়াত পাঠ করলে অন্তরে প্রশান্তি নেমে আসে।
দৈনন্দিন জীবনে আমল
প্রতিদিনের জীবনে আয়াতুল কুরসি পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর, ঘুমানোর আগে এবং বিপদে পড়লে এটি পাঠ করা উচিত। এতে আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ পাওয়া যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আয়াতুল কুরসির ফজিলত বোঝার ও আমল করার তওফিক দান করুন।
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত
আয়াতুল কুরসি কুরআনের শ্রেষ্ঠতম আয়াতগুলোর একটি, যা সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে। এটি আল্লাহর অসীম জ্ঞান, শক্তি ও সার্বভৌমত্বের পরিচয় বহন করে। ইসলামে ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার উপকারিতা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তার ও জান্নাতের মাঝে শুধু মৃত্যুই অন্তরায় থাকবে।” (নাসাঈ, তাবারানি)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ফরজ নামাজের পর নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করা জান্নাত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এছাড়া, আরও কিছু বিশেষ ফজিলত রয়েছে—
১. আল্লাহর হেফাজত – নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে শয়তান ও সব ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন।
2. গুনাহ মাফের সুযোগ – এটি আল্লাহর রহমত লাভের একটি বড় মাধ্যম, যা পূর্ববর্তী গুনাহ মাফের কারণ হতে পারে।
3. আত্মিক প্রশান্তি – দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্তি পেতে ফরজ নামাজের পর এই আয়াত পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর।
নিয়মিত আমল করার তাগিদ
আমাদের উচিত প্রতিদিনের ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এটি শুধু জান্নাতের সুসংবাদই দেয় না, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল বিপদ-আপদ থেকেও হেফাজত করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই গুরুত্বপূর্ণ আমল করার তৌফিক দান করুন।
আয়াতুল কুরসি পড়ে কি ফু দেওয়া যাবে?
আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্যতম শক্তিশালী আয়াত, যা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও সুরক্ষার বার্তা বহন করে। অনেক মুসলিম বিশ্বাস করেন, এটি পড়লে শয়তান ও অনিষ্টকারী শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই অনেকেই জানতে চান, আয়াতুল কুরসি পড়ে কি ফু দেওয়া যাবে?
ইসলামের দৃষ্টিতে ফু দেওয়া
ইসলামে রোগ-মুসিবত থেকে বাঁচার জন্য কুরআনের আয়াত পাঠ করে দোয়া করার অনুমতি রয়েছে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও কিছু বিশেষ দোয়া ও কুরআনের আয়াত পড়ে নিজের শরীরে ফু দিতেন এবং অন্যদের জন্যও এই আমল করতেন।
হাদিসে উল্লেখ আছে, আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) রাতে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে নিজের শরীরে ফু দিতেন।” (বুখারি, মুসলিম)
যেহেতু আয়াতুল কুরসি শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী একটি আয়াত, তাই এটি পড়ে ফু দেওয়া ইসলামসম্মত এবং তা করা যায়।
কখন ফু দেওয়া উত্তম?
১. রোগমুক্তির জন্য – শরীরে ব্যথা বা অসুস্থতা থাকলে আয়াতুল কুরসি পড়ে শরীরে ফু দেওয়া যায়।
২. নজর ও বদনজর থেকে বাঁচতে – শিশু বা পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে তাদের ওপর ফু দেওয়া যেতে পারে।
৩. বিপদমুক্তির জন্য – যেকোনো অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে নিজের বা অন্যের গায়ে ফু দেওয়া যায়।
আয়াতুল কুরসি পড়ে ফু দেওয়া সম্পূর্ণ বৈধ এবং এটি হাদিসের আলোকে অনুমোদিত। তবে এটি করতে হবে বিশ্বাস ও খালেস নিয়তে, যেন আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে কি হয়?
আয়াতুল কুরসি হলো কুরআনের একটি বিশেষ আয়াত, যা আল্লাহর অসীম শক্তি, জ্ঞান ও সার্বভৌমত্বের প্রকাশ। এটি সূরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত এবং ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। অনেকেই জানতে চান, আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে কি হয়? ইসলামে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমানোর ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে সারা রাত আল্লাহর হেফাজতে থাকে এবং শয়তান তার কাছেও আসতে পারে না।” (বুখারি, মুসলিম)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়লে—
১. আল্লাহর বিশেষ হেফাজত লাভ হয় – রাতে বিপদ, দুঃস্বপ্ন ও অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়।
২. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় – শয়তান ওই ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারে না।
৩. মনের প্রশান্তি ও শান্তির ঘুম হয় – দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা কমে যায়, ঘুম গভীর হয়।
৪. রাতে আকস্মিক বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায় – অনেক হাদিসে এসেছে, ঘুমানোর আগে এই আয়াত পড়লে যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
কীভাবে আমল করবেন?
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ওজু করে বা পবিত্র অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়া উচিত। কেউ চাইলে এটিকে তিনবার পাঠ করতে পারেন, যা হাদিস অনুযায়ী আরও বেশি বরকতময়।
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা লাভ হয়। এটি শুধু রাতের সুরক্ষাই দেয় না, বরং মনের শান্তিও নিশ্চিত করে। তাই নিয়মিত এই আমল করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণকর।