বুড়িগঙ্গা কোন নদীর আরেক নাম বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,তবে বুড়িগঙ্গার হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে, এটি আবার ঢাকার প্রাণ হয়ে উঠতে পারে। নদী বাঁচানোর মাধ্যমে শুধু পরিবেশই রক্ষা করা যাবে না, বরং ঢাকা শহরকে আবারও প্রাণবন্ত করে তোলা সম্ভব হবে।এই নদীটি প্রাচীনকালে ঢাকার বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বুড়িগঙ্গা কোন নদীর আরেক নাম
ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মুঘল আমলে ঢাকার বিকাশ শুরু হয়। বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকার প্রাণ। একসময় এর স্বচ্ছ জলধারা, সরগরম নৌবন্দর, এবং ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ঢাকাকে এক ঐতিহ্যবাহী নগরীতে পরিণত করেছিল।
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ বুড়িগঙ্গা কোন নদীর আরেক নাম ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে পুরনো ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদী সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে রয়েছে তথ্যবহুল পর্যালোচনা, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশা মানুষদের গবেষণাধর্মী লেখাগুলো প্রকাশিত করা হয়।
ইতিহাস, পরিচয় ও পরিবর্তনের ধারা
কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, বুড়িগঙ্গা আসলে একটি বড় নদীরই একটি অংশ ছিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই নদী একসময় পদ্মার প্রধান শাখা ছিল এবং পরবর্তীতে স্বতন্ত্রভাবে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ফলে প্রশ্ন ওঠে—বুড়িগঙ্গা কোন নদীর আরেক নাম? এটির উৎপত্তি কোথায়? কিভাবে এটি ঢাকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেল? এই নিবন্ধে সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
বুড়িগঙ্গার উৎস ও নামের পরিবর্তন
বুড়িগঙ্গা আসলে গঙ্গা নদীরই একটি প্রবাহ ছিল। দীর্ঘকাল আগে, গঙ্গার একটি ধারা পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল। ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের কারণে গঙ্গার মূল প্রবাহ সরে গেলে, এই শাখাটি আলাদা হয়ে যায় এবং পরে এটি বুড়িগঙ্গা নামে পরিচিত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন, প্রাচীনকালে এটি গঙ্গারই একটি অংশ হওয়ায় এর নামের সঙ্গে “গঙ্গা” শব্দটি যুক্ত ছিল।
“বুড়িগঙ্গা” নামটির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কেউ বলেন, এটি “পুরাতন গঙ্গা” বা “বৃদ্ধ গঙ্গা” থেকে এসেছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে “বুড়িগঙ্গা” নামে পরিচিত হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয়দের প্রচলিত ভাষার ব্যবহারের কারণেই এটি বুড়িগঙ্গা নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বুড়িগঙ্গা ও ঢাকার সম্পর্ক
ঢাকা শহরের ইতিহাস গড়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গাকে ঘিরেই। মুঘল আমলে যখন সুবাদার ইসলাম খান ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন (১৬১০ সাল), তখন বুড়িগঙ্গার তীরে এই নগরীর বিস্তার শুরু হয়। কারণ ছিল স্পষ্ট—নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও ব্যবসার প্রধান মাধ্যম।
বুড়িগঙ্গার তীরে একসময় বড় বড় বাণিজ্যিক ঘাট গড়ে ওঠে, যেমন সদরঘাট, বাদামতলী ঘাট, ওয়াইজঘাট। এখান থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন করা হতো। ঢাকা যখন মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল, তখন এই নদী দিয়েই সেই মসলিন বিশ্বের নানা প্রান্তে রপ্তানি করা হতো।
বুড়িগঙ্গার পরিবর্তন ও বর্তমান সংকট
একসময় যেখানে বুড়িগঙ্গার নির্মল জলধারা বয়ে যেত, আজ সেখানে কেবলই দূষিত পানি ও দখলের চিত্র।
১. নদীর দখল ও সংকোচন
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড় দখল হয়ে গেছে।
অবৈধ স্থাপনার ফলে নদীর প্রকৃত প্রশস্ততা কমে গেছে।
একসময়ের প্রশস্ত বুড়িগঙ্গা আজ সংকীর্ণ একটি প্রবাহ মাত্র।
২. দূষণ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি
শহরের গৃহস্থালি বর্জ্য ও শিল্প কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে।
ট্যানারি ও রাসায়নিক বর্জ্যের কারণে নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে।
নদীর প্রাণীকুল ও জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
৩. পানি প্রবাহ কমে যাওয়া
অতিরিক্ত পলি জমার কারণে নদীর নাব্যতা কমেছে।
আশপাশের জলাশয় ও সংযোগ খালগুলো মরে যাওয়ায় নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শুকনো মৌসুমে নদীর পানি মাত্রাতিরিক্ত কমে যায়, যা নৌপরিবহন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বুড়িগঙ্গার পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা
নদী পুনরুদ্ধার সম্ভব, তবে এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সঠিক উদ্যোগের প্রয়োজন।
১. দখলদারিত্ব উচ্ছেদ ও খনন কাজ
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর প্রাকৃতিক প্রশস্ততা ফিরিয়ে আনতে হবে।
নিয়মিতভাবে নদী খনন করে পলি অপসারণ করতে হবে।
নদীর দুই পাড়ে পরিকল্পিত সবুজায়ন করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
২. দূষণ নিয়ন্ত্রণ
শিল্পকারখানাগুলোর বর্জ্য শোধনাগার নিশ্চিত করতে হবে।
নদীতে গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রযুক্তি ও সরকারি তদারকি জোরদার করতে হবে।
৩. নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা
সংযোগ খালগুলো পুনরুদ্ধার করে পানি প্রবাহ বাড়ানো দরকার।
পরিকল্পিতভাবে জলাধার তৈরি করে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখা যেতে পারে।
প্রতিবেশী নদীগুলোর সঙ্গে বুড়িগঙ্গার সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হলে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে।
বুড়িগঙ্গা শুধু একটি নদী নয়, এটি ঢাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার ফলে নদীটি আজ মৃতপ্রায়। একসময় এটি গঙ্গার একটি শাখা ছিল এবং তখন থেকেই এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
শেষ কথা
বুড়িগঙ্গা কোন নদীর আরেক নাম এই বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী, বুড়িগঙ্গা নদী বর্তমানে দূষণের কারণে সংকটে পড়েছে। শহরের বর্জ্য, শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং পলিথিন দূষণের প্রধান কারণ। তবুও, এই নদী ঢাকার মানুষদের জন্য একটি ঐতিহ্যের প্রতীক,নদীটিকে দূষণমুক্ত করার জন্য সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে আবারও ঢাকার অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।