ধোলাই খাল বুড়িগঙ্গা বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ধোলাই খাল ও বুড়িগঙ্গা কেবলই দুটি জলপথ নয়, বরং ঢাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও নগর উন্নয়নের মূল ভিত্তি। অথচ আজ তারা চরম অবহেলার শিকার। খাল ও নদী সংরক্ষণ করা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, বরং এটি ঢাকার ভবিষ্যৎ টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।
ধোলাই খাল ও বুড়িগঙ্গা : ঢাকার ঐতিহ্যের স্রোতধারা
ঢাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও নগরায়ণের সঙ্গে নদী ও খালের সম্পর্ক গভীর। একসময় এ শহর ছিল খাল-বিল ও নদী দ্বারা বেষ্টিত, যা ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত এবং নগর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। বুড়িগঙ্গা নদী যেমন ঢাকার প্রধান জলপথ ছিল, তেমনি ধোলাই খাল ছিল শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
কালের বিবর্তনে এ দুটি জলপথের গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়েছে, তবে ইতিহাসের পাতায় তাদের অবস্থান এখনো অমলিন। এই প্রবন্ধে আমরা “ধোলাই খাল বুড়িগঙ্গা” প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত দিক আলোচনা করবো।
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ ধোলাই খাল বুড়িগঙ্গা ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে পুরনো ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদী সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে রয়েছে তথ্যবহুল পর্যালোচনা, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশা মানুষদের গবেষণাধর্মী লেখাগুলো প্রকাশিত করা হয়।
বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিকরা ভারত উপমহাদেশের এই ঐতিহ্য বুড়িগঙ্গা নদীকে স্মৃতিচারণ করে সারা পৃথিবীর বুকে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, এই ঐতিহ্য রক্ষার্থে এখন কাজ করতে হবে।
ধোলাই খাল: এককালের শহরের লাইফলাইন
ধোলাই খাল ঢাকার অন্যতম পুরাতন খাল, যা অতীতে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এটি মূলত পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হতো।
- “যে খাল একসময় ঢাকার প্রাণ ছিল, তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে নগরায়ণের চাপে।”
ধোলাই খালের ইতিহাস ও উৎপত্তি
মুঘল আমলে ঢাকাকে বাণিজ্য ও প্রশাসনিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে অনেক খাল খনন করা হয়, যার মধ্যে ধোলাই খাল অন্যতম। এটি তখনকার ঢাকার প্রধান নৌপথ ছিল, যা বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
- “ধোলাই খালের তীরে একসময় ছিল ব্যবসায়ীদের কোলাহল, আর আজ সেখানে শুধু যানজট ও কংক্রিটের দখল।”
বুড়িগঙ্গার সঙ্গে ধোলাই খালের সম্পর্ক
বুড়িগঙ্গা নদী ছিল ঢাকার মূল জলপথ, আর ধোলাই খাল ছিল শহরের অভ্যন্তরীণ সংযোগের জন্য ব্যবহৃত শাখা জলপথ। খালটির প্রবাহ বুড়িগঙ্গা থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করে আবার বুড়িগঙ্গার সঙ্গেই মিলিত হতো।
- “বুড়িগঙ্গা আর ধোলাই খাল ছিল যেন ঢাকার ধমনী ও শিরা, যেখানে জীবন একসময় জলযানে প্রবাহিত হতো।”
নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হত
ধোলাই খালের মধ্য দিয়ে নৌকা, সাম্পান ও ছোট বড় জাহাজ চলাচল করত। ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল সহজে পরিবহন করতেন এবং এটি ঢাকার অভ্যন্তরীণ বাজারগুলোর সঙ্গে বুড়িগঙ্গার সংযোগ স্থাপন করত।
- “একসময় যেখানে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ত, সেখানে আজ শুধুই ইট, পাথর আর ধূলার স্তূপ।”
ধোলাই খালের বর্তমান অবস্থা
আজকের দিনে ধোলাই খাল তার অতীত জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। খালটি প্রায় বিলুপ্তির পথে, এবং বর্তমানে এর বেশিরভাগ অংশ দখল হয়ে গেছে।
দখল ও দূষণের শিকার
- খালের অনেক অংশ ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
- শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্যের কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে।
- খালের চারপাশে অপরিকল্পিত নির্মাণ ও অবৈধ দখল খালটিকে সংকুচিত করে ফেলেছে।
- “নদী ও খালকে আমরা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছি, কিন্তু সংরক্ষণের জন্য কিছু করিনি।”
পরিবেশগত বিপর্যয়
- খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরের জলাবদ্ধতা বেড়েছে।
- অতীতে খালটি ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখত, যা আজ নেই।
- ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় খালের ভূমিকা থাকলে যানজট অনেকাংশে কমানো যেত।
- “যদি ধোলাই খাল টিকে থাকত, তাহলে ঢাকার যানজট আর জলাবদ্ধতা এত প্রকট হতো না।”

বুড়িগঙ্গার বর্তমান পরিস্থিতি ও সংকট
বুড়িগঙ্গাও বর্তমানে চরম দূষণের শিকার। শহরের শিল্পবর্জ্য, গৃহস্থালি আবর্জনা ও দখলদারদের কারণে নদীটি তার স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়েছে।
দূষণের মূল কারণ
কল-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়।
নৌযানের তেল ও রাসায়নিক নদীর পানিকে বিষাক্ত করছে।
আবাসিক ও বাণিজ্যিক বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
- “বুড়িগঙ্গার বুকের উপর যে শহর দাঁড়িয়ে আছে, সেই শহরই আজ তাকে হত্যা করছে।”
বুড়িগঙ্গা ও ধোলাই খালের পুনরুজ্জীবন সম্ভব কি?
হ্যাঁ, যথাযথ উদ্যোগ নিলে ধোলাই খাল ও বুড়িগঙ্গা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা, সরকারি উদ্যোগ এবং নাগরিক সচেতনতা।
১. খাল পুনরুদ্ধার ও পরিষ্কারকরণ
ধোলাই খালের দখলকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করতে হবে।
খালের পানি পরিষ্কার করে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
২. বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধ
শিল্প ও নগর বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
“যদি সরকার ও জনগণ একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তবে ধোলাই খাল ও বুড়িগঙ্গা আবার আগের রূপ ফিরে পেতে পারে।”
“যে শহর নদী ও খাল হারায়, সে শহর তার প্রাণও হারায়।”
“বুড়িগঙ্গা ও ধোলাই খালকে বাঁচানো মানে ঢাকার অস্তিত্বকে বাঁচানো।”
এখনো সময় আছে, যদি সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই দুই জলপথ আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে। আর এ দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, বরং আমাদের সবার!
শেষ কথা
ধোলাই খাল বুড়িগঙ্গা এই বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী, তাহলে আমাদের এই বুড়িগঙ্গা নদীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, তরুণ প্রজন্মসহ সারা পৃথিবীতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবো, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বুড়িগঙ্গা নদী বা পুরনো ঢাকা কেন্দ্রিক বিভিন্ন আদি ইতিহাস কে তুলে ধরতে হবে, যা খুব সহজে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষ, আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।