সাতকাহন সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ‘ সাতকাহন সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ ‘ বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
সাতকাহন সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ সাতকাহন সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ
বাঙলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারের লেখা সাতকাহন সুদীর্ঘ ও সুবিন্যস্ত ব্যপক সাড়াজাগানো একটি উপন্যাস।
সাতকাহন শুধুমাত্র একটা গল্প বা উপন্যাস নয়,একটা গোটা নারী জীবনের ঘাত প্রতিঘাতের পরও একজন সাহসী তেজস্বী নারীর পক্ষে তার পায়ের তলার মাটি কিভাবে শক্ত করতে হয় তার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই উপন্যাসে আমরা খুঁজে পাবো জীবনের সাথে আপোষহীন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক লড়াকু মেয়ের, সাহসী নারী হয়ে উঠার কাহিনী। যে সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলো। যার জীবনের শুরু থেকে ছিলো নিষ্ঠুর বাস্তবতা। যার কৈশোর জীবন থেকে নিতে হয়েছিলো কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত।
উত্তর বঙ্গের একটা পল্লি এলাকা তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আঙরাভাসা নদী, সে নদীতে বরশীতে বা আচঁলে ছেঁকে ছোট মাছ ধরা আর চা বাগানে চারপাশে খেলাধুলার মধ্যেই কাটছিলো উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র দীপাবলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈশব।
খুবই মধুর সময় পার করছিলো দীপাবলি। কিন্তু জন্ম থেকে যৌবন পুরুটা সময়ই নিষ্ঠুরতায় ভরপুর ছিলো তার জীবনে। জন্মের সাথে সাথে মা মারা যায় তার বাবা তার দায়িত্ব এড়িয়ে দেশান্তরি হয়ে যায়। সেই সময় থেকে তার মাসি অঞ্জলি আর অমরনাথবাবু তার মেশুমশাই দীপাবলিকে নিজের মেয়ের মতো বড় করে, দীপাবলি জানতোই না তারা তার বাবা মা না।

সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ
শৈশবে দীপাবলি খুব দুরন্ত ছিলো, ছেলেদের সাথে খেলাধুলা আর মেলামেশা তার বাবা মা আর ঠাকুরমার চোখে বাজতো, এক সময় খুব বড় ঘরে তার বিয়ে হয় মাত্র ১১ বছর বয়সে। মাত্র তিনদিনের জন্য সিথীতে সিঁদুর আর হাতে শাখাপলা উঠে। যৌবন আশার পূর্বেই অল্প বয়সে সে বিধবা হয়। মিথ্যা কিছু বিধবার নিয়ম চাপিয়ে দেয়া হয় তার উপর। কিন্তু সে নিজেকে কখনোই বিধবা ভাবতোনা, যা হয়েছে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, প্রকৃতি এসব আয়োজন করে রেখেছে। আবার সে পড়াশুনা শুরু করে নিজের ভাগ্য পাল্টাবে বলে।
দ্বিতীয় জীবনে তার প্রিয় সত্যসাধন মাস্টার আর তার বাবা মা সাফল্য লাভে খুবই অবদান রেখেছিলেন। আরেকজন নারী তার নাম না বললেই নয়,তিনি রমলা সেন,নিজের স্বাধীনমতো থাকতেন,তিনি দীপাবলিকে পড়াশুনার করার জন্য আর জীবনে কিছু করতে হবে তার জন্য উৎসাহ দিতেন। কলকাতার সেরা স্কটিশ কলেজে শিক্ষাজীবন শুরু করে।এক সময় তার বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান। মা তাকে ভুল বুঝতে শুরু করে। পরিবারের সবাই তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। গৃহহীন হয়ে সে দিনের পর দিন হোস্টলে কাটিয়েছে।খুবই একা হয়ে যায় দীপা।
তবুও বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ থেমে নেই। এক সময় নিজ যোগ্যতার বলে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে। বহু বাধাগ্রস্ত হয়েও সে পিছপা হয়নি,নিজ যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে সে পেয়েছে সর্বভারতীয় সরকারি চাকরি। একাকিত্বের জীবনে সে বেছে নিয়েছিলো নিজের জীবনসঙ্গী। কিন্তু সম্পর্কের টানাপোড়ন আর পরিস্থিতি কোনটাই দীপাবলিকে শেষ পর্যন্ত সুখী করতে পারেনি। জীবন খুবই বিচিত্র।
কখনোই কোনো হিসেব ঠিকঠাক মিলে না।ঈশ্বর নামক যে অদৃশ্য শক্তিটি লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ত প্যাঁচ কষেছেন তার অষ্টপ্রহর শুধুই একই চিন্তা, যেমন করেই হোক মানুষের যাত্রাপথ গুলিয়ে দিতে পারলেই হবে। সতেরো থেকে সাতাশ গুলিয়ে দিতে পারলেই হলো,বাকি জীবনটা সে আর ভাঙা মাজা সোজা করতে পারবেনা, ভদ্রলোকের তাতেই আনন্দ। উপন্যাসের শুরু থেকেই আমি দীপাবলির প্রেমে পড়ি। মাঝে মাঝে আমিও হারিয়ে যাই সেই জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগানে। নিজেকে বার বারই দীপাবলির জায়গায় বসাই। আর সে আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে একা গন্তব্যহীন পথটা চিনে নিতে হয়। প্রত্যেক নারীর এই বইটা পড়া উচিত নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য,আর প্রতিটি পুরুষের এই বই পড়া উচিত একজন নারীকে সম্মান দেখানোর জন্য, নারীকে মানুষ ভাবার জন্য।
( কৃতজ্ঞ = বুক রিভিউ কাকলী বর্মণ,বইয়ের নাম :সাতকাহন , লেখক : সমরেশ মজুমদার )
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ সাতকাহন সমরেশ মজুমদার বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।