নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও সুবিধাপ্রাপ্তির অভিযোগ উঠেছে, যা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় তার ঘনিষ্ঠজন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বিভিন্ন বিশেষ সুবিধা পেয়েছে, তা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
গ্রামীণ টেলিকমের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্স পেয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে রবি, বাংলালিংকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—কেন কেবল গ্রামীণ টেলিকম-সম্পর্কিত একটি প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা পেল, যেখানে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ফাইল এখনো অনুমোদিত হয়নি।
অন্তবর্তী সরকারের সময় গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স পেয়েছে, যা ওই সময়ে দেওয়া একমাত্র অনুমোদন। জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের অন্যতম স্পর্শকাতর খাত হওয়ায় এই একক সুবিধা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।
গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি নামে একটি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনও সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজে রয়েছেন ড. ইউনূসের ছোট ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদ। একইসঙ্গে, লামিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে। সরকারের আরেক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক নূরজাহান বেগম।
এসব নিয়োগ ও সুবিধা বিতরণের মধ্যে পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রভাব ছিল কি না—তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ড. ইউনূসের ভাইয়ের ছেলে অপূর্ব জাহাঙ্গীরকেও উপপ্রেস সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যদিও তার গণমাধ্যম বা রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ কাঠামোর সঙ্গে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না।
অন্যদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এই পরিবর্তনের ফলে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমে পর্যাপ্ত হস্তক্ষেপ বা তদারকি করতে পারবে না।
সবশেষে, গ্রামীণ কল্যাণ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৬ কোটি টাকা ঋণ মওকুফ করে দেওয়ার খবর উঠে এসেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সরকারের নীতি ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছে।
জনসাধারণের মনে প্রশ্ন আসছে, একজন নোবেলজয়ী হলেও, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে তার প্রভাব কতটা ‘স্বাধীন’ এবং কতটা ‘পেশাগত’? স্বার্থের সংঘাত এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে, যা একদিকে সরকারের নিরপেক্ষতা ও অন্যদিকে গণতান্ত্রিক নীতির উপর বড় আঘাত হানতে পারে।