যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্যবইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
হুমায়ূন আহমেদ একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্রনির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।
উপন্যাসের নাম নেওয়া হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের “আট বছর আগের একদিন” কবিতা থেকে।
উপন্যাসের কথক এবং ভিলেন চরিত্র মিজান। মিজানকে ভিলেন বলার কারণ তার মাঝে নায়কসুলভ বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি। মিজান তার স্ত্রী রুবাকে ঘুমের মাঝে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে। স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা সে এক মাস আগে থেকেই করছিল। সেজন্য সে রুবার সাথে ঝগড়া করত কারণ সে জানত রুবার স্বভাব হচ্ছে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া। মিজান থানার ওসির সাথেও বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলে যেন সে প্রয়োজনে তাকে ব্যবহার করতে পারে।
বলা চলে বাসর রাতেই সে রুবাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তখন যখন সে দেখতে পায় রুবা মৃত্যুর পরেও নড়াচড়া করছে,তার কাছে পানি চাইছে।
মূলত এসব ঘটনা ভৌতিক আবহ তৈরি করলেও এগুলো নিছকই মিজানের অবচেতন মনের কল্পনা। ধারণা করা যায় মিজান মানসিকভাবে অসুস্থ। সাত বছর বয়সে সে তার মাকে হারায়। তার মা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। নিজের পোষা কুকুরের কামড়েই তিনি জলাতঙ্ক রোগে ভুগেন। বদ্ধ ঘরে তিলে তিলে মারা যান।

মায়ের মৃত্যুর পর মিজানের বাবাও অন্যরকম হয়ে যান। শেষ বয়সে তিনি পানি খেতে চাইতেন না। কারণ উনার স্ত্রী মৃত্যুর সময় পানি খেতে পারেন নি।
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ হুমায়ূন আহমেদ
এসব ঘটনাই মিজানকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলে। মিজান দেখতে সুন্দর নয় এ জিনিস নিয়েও সে হীনমন্যতায় ভুগত। অফিসের কেউ তার সাথে কথা বলতে চায় না। রুবা দেখতে অসম্ভব সুন্দরী এবং তার অনেক ছেলে বন্ধু ছিল। মিজান সবসময় আতঙ্কে থাকত রুবা তাকে ছেড়ে চলে যাবে। এবং সবকিছু মিলিয়েই তার মানসিক অসুস্থতা,তার নিজের স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণতা তাকে বাধ্য করে রুবাকে খুন করতে।
রুবাকে খুন করার পর তার অবচেতন মনে ভেসে আসে তার মায়ের স্মৃতি। তার মায়ের কষ্ট গুলো সে রুবার মাঝে দেখতে পায়। এবং অবশেষে তার বাবা তার সামনে এসে ধরা দেন। মূলত এটিও তার অবচেতন মনেরই কল্পনা মাত্র।
তার বাবা তাকে বুঝান রুবা তাকে খুব ভালোবাসত। এখানে উনার বলা উক্তিটি মর্মস্পর্শী।
” তোর মা’র ভালোবাসা অপাত্রে পড়ে নি, কিন্তু আমার বৌ-মা’র ভালোবাসা পড়েছিল অপাত্রে।”
মিজান তার কল্পনায় তার বাবাকে সেই পুরোনো সুয়েটার গায়ে দেখে যে সুয়েটারের একটি হলুদ বোতাম হারিয়ে যাওয়ায় তার মা হলুদ বোতামের জায়গায় একটি লাল বোতাম লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ করেন নি। বরং এটা পড়েই স্কুলে গিয়েছিলেন। এসব ছোট ছোট ঘটনাতেই বুঝা যায় উনি উনার স্ত্রীকে কতটুকু ভালোবাসতেন।
মিজানের বাবার ছায়ার সাথে তার কথোপকথনের মাধ্যমে জানা যায় রুবা অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
মিজান শেষমেশ অপরাধবোধে ভুগতে থাকে এবং ধরা দেয় পুলিশের কাছে।
হুমায়ূন আহমেদের প্রায় গল্পই ভৌতিক আবহে তৈরি। উনি উনার গল্পে রহস্য রেখে যেতেই হয়তো পছন্দ করেন যে রহস্য ভেদ করার দায়িত্ব উনি দিয়ে যান পাঠকদের উপর।
উনার এ গল্পের পরিবেশের সাথে আমি কিছুটা মিল পেলাম আমার পড়া মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত নাটক “কবর” এর। “কবর” নাটকের নেতা এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর দুজনেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং তারা দুজনেই জানতেন তারা ভাষা আন্দোলনকারীদের উপর যে গুলিবর্ষণ চালিয়েছিলেন,যে হত্যাযজ্ঞ করেছিলেন,তা রীতিমতো অন্যায় ছিল। তাই তারা তাদের অবচেতন মনে শহীদদের দেখতে পেয়েছিলেন যারা বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা মৃত্যুর জন্যে জন্মায় নি। তারা এত সহজে মরবে না।
তবে দুটো জিনিসের তুলনায় আমি যাব না। কারণ মুনীর চৌধুরীর ভাষা আন্দোলনভিত্তিক এ নাটকের তুলনা কোন কিছুর সাথেই আসলে হয় না।
আমি শুধু বুঝাবার চেষ্টা করলাম এমন আবহ বাংলা সাহিত্যে নতুন নয়।
লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার এ উপন্যাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ঈর্ষার ফল কতোটা ভয়াবহ হতে পারে।
উপন্যাসের শেষ লাইনটি চমৎকার এবং বলা চলে এ লাইনটি বইয়ের নামকরণ এর সার্থকতা তুলে ধরে।
” আকাশে চাঁদ আছে। বারান্দায় চাঁদের ক্ষীণ আলো। এটা কি রুবার সেই বিখ্যাত পঞ্চমীর চাঁদ? কখন ডুববে পঞ্চমীর চাঁদ?
( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,নবনীতা দত্ত তিথি ,বইয়ের নামঃ যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ ,লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ )
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।