বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ‘ বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
“রাজা যায় রাজা আসে। প্রজা যায়, নতুন প্রজা আসে। কিছুই টিকে থাকে না। ক্ষুদার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবে ‘গল্প’ গিলতে পারে না। গল্প থেকে যায়।
বুক রিভিউ
বাদশা নামদারের কিছু গল্প শোনানো শেষ হলো।”
এভাবেই লেখক ‘বাদশাহ নামদার’ উপন্যাসের সমাপ্তি টানেন। আমার মনে হয় লেখক যথার্থই বলেছেন। সময়ের ব্যবধানে সবকিছু হারিয়ে গেলেও কিছু মানুষের জীবনের গল্প ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায় না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় সোনালী অক্ষরে সেই মানুষদের জীবনের গল্প লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে।
এই বইয়ে লেখক ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা মোগল সম্রাট হুমায়ূনের জীবনের গল্প পাঠককে শুনিয়েছেন। যে গল্প খুবই চমকপ্রদ ও দারুণ রোমাঞ্চকর। কাব্য প্রিয় ও চিত্রকলায় অনুরক্ত সম্রাট হুমায়ূন মোগল সম্রাটদের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। আর একটা প্রজন্মের কাছে বাংলা সাহিত্যের মুকুটহীন সম্রাট আরেক হুমায়ূন তার কলমের জাদুতে মোগল সম্রাট হুমায়ূনকে দারুণ ভাবে চিত্রিত করেছেন।

আমি নিশ্চিত বইটি পড়ে শেষ করার পরে পাঠক ‘আকবর দ্যা গ্রেট’ না বলে ‘হুমায়ূন দ্যা গ্রেট’ বলাকেই যথার্থ মনে করবে। কারণ সম্রাট আকবরের গায়ে কিছু কাপুরুষোচিত কাজের কলংক লেপ্টে আছে। তার বিপরীতে কোন ধরনের কলংকের কালিমা সম্রাট হুমায়ূনকে স্পর্শ করেনি। বরং তিনি ছিলেন উদার ও দয়াবান। তিনি অন্যান্য মোগল সম্রাটদের মত ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন বিচিত্র মানুষ। একই সাথে তিনি ছিলেন কবি, চিত্রকর ও সাহিত্য রসিক।
মোগল চিত্রকলার শুরু হয় তার হাত দিয়ে। চরম নাটকীয়তায় ভরা ছিল তার জীবন। খামখেয়ালিপনা আর দয়া দুটোরই বসবাস ছিল তার হৃদয়ে। পিতা সম্রাট বাবরের প্রতি ভালবাসা আর আনুগত্যের অভাব না থাকলেও তার খামখেয়ালিপনার জন্য মাঝে মধ্যে পিতার অবাধ্য হতেন। পিতার রাজকোষ থেকে অর্থকড়ি লুট করে পালিয়ে যাওয়া, নিজের দায়িত্ব ফেলে পিতাকে দেখার জন্য হুট করে চলে আসা, আবার বারবার খবর পাঠানোর পরেও পিতার ডাকে সাড়া না দেওয়ার মতো অদ্ভুত কাজ করে নিজের বিচিত্র চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ
পিতার মৃত্যুর পরে সম্রাটের দায়িত্ব নেওয়ার পরেও তার চরিত্রের বৈচিত্র্যতার কমতি ছিল না। অন্য সম্রাটরা যেখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরেই বিদ্রোহের ভয়ে অন্যান্য ভাইদেরকে হত্যা করে সেখানে সম্রাট হুমায়ূন ভাইদের একের পর এক অপরাধ ক্ষমা করে দেন। সভাসদগণের বিরোধিতা সত্বেও রাজপুত রাণী কর্ণাবতীর সাহায্যের আহবানে সাড়া দেন। বাহাদুর শাহের দুর্গ দখলের পরে সামান্য অপরাধে মসজিদের ইমামকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
যদিও পরে এই ঘটনার জন্য তিনি অত্যন্ত অনুতপ্ত হন। প্রজাদের অন্যায় মৃত্যুদন্ডের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সম্রাটের অনুমতি ছাড়া মৃত্যদন্ড কার্যকর না করার ফরমান জারি করেন। ভাইদের চরম বিরোধিতার পরেও প্রাণ বাঁচানোর প্রতিদান হিসেবে একজন সামান্য ভিসতিওয়ালাকে (মশকে করে পানি সরবরাহকারী) একদিনের জন্য দিল্লীর সিংহাসনে বসিয়েছেন।
বইটিতে সম্রাট হুমায়ূনের পুরো জীবনের এইরকম আরও অনেক চমকপ্রদ ও বৈচিত্র্যময় ঘটনা বর্নিত হয়েছে। লেখক হুমায়ূন আহমেদের যতগুলো বই আছে, আমি মনে করি এই বইটি তার মধ্যে অন্যতম সেরা বই। লেখক বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন সম্রাট হুমায়ূনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে আলাদা কোন রঙ ব্যবহার করেনি। আলাদা গল্পও তৈরি করেন নি। লেখকের স্বভাবসুলভ সহজ সরল, প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষায় রচিত এই বইটি পড়ে একজন বাদশাহ নামদারের অসাধারণ জীবন সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন।
( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,শাহরিয়ার রশীদ খসরু, বইয়ের নামঃবাদশাহ নামদার , লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ )
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।