দহনের দিনে জোছনার ফুল আফিফা পারভীন বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ‘ দহনের দিনে জোছনার ফুল আফিফা পারভীন বুক রিভিউ ‘ বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
দহনের দিনে জোছনার ফুল আফিফা পারভীন বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ দহনের দিনে জোছনার ফুল আফিফা পারভীন বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আফিফা পারভীন বুক রিভিউ
★ ফ্ল্যাপের কথা:
সদ্য মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে বেরুনো এক তরুণী, যে সবসময় বাবা-মায়ের সতর্ক নজরদারি ও ভালোবাসার ঘেরাটোপে জীবনের এতটা দিন কাটিয়েছে, তার ইচ্ছে হলো স্বাধীনভাবে কিছু কাজ করার। পরিবারের সাথে অনেক মানসিক লড়াইয়ের পর সে রওনা হলো দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক অজানা ও অচেনা গন্তব্যে।

দহনের দিনে জোছনার ফুল বুক রিভিউ
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল জাতিগত নিপী ড়ন ও দমনের মুখে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এক অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সীমিত সম্পদ নিয়ে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীদের চাপ মোকাবেলা করতে বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অভাব যেখানে চরম হয়, ন্যায়-নীতি সেখানে জানালা দিয়ে পালায়। দারিদ্র্য ও অভাবের কষা ঘাতে কয়েক লাখ মানুষ অধ্যুষিত একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিনের পর দিন নানা রকমের অপরাধের আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য এক অকুতোভয় যুবককে মায়াময় পরিবার ও আপনজনদের ফেলে চলে আসতে হয় এই অপরা ধপূর্ণ এলাকায়।
পথিমধ্যে কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ সেই ডাক্তার তরুণী ও এই অকুতোভয় যুবকের অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ হয় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। নিয়তি নির্দেশিত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলার পথে তাদের অনুভূতির রং বদল ঘটে। ক্ষণিকের পথসঙ্গী থেকে তারা হয়ে উঠে মনোসঙ্গী। কিন্তু যাদের জীবনের মূলমন্ত্র ‘কান্ট্রি কামস ফার্স্ট’, তাদের কাছে ব্যক্তিপ্রেমের চেয়ে দেশপ্রেম সবসময়ই অগ্রাধিকার পায়। সেই অকুতোভয় যুবক, নব্য তরুণী ডাক্তার ও তাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা আরও কিছু মানুষের জীবনালেখ্য ‘দহনের দিনে জোছনার ফুল’।
★ পাঠপ্রতিক্রিয়া:
পাঠক আমি বেশ মন্থর গতিসম্পন্ন। আর খানিকটা খুঁ তখুঁতে স্বভাবের। সব ধরণের বই সব ধাঁচের লেখা পড়তে পারি না। অস্থিরমতি পাঠকসত্তা তাই সবসময় খুঁজে ফেরে একটা মনের মতো বই। কিন্তু খুঁজে আর পাই না। কোনো বইয়ের গল্পটা সুন্দর, কিন্তু গল্প বলার ধরণটা ঠিক আন্তরিক নয়, বড্ড খাপছাড়া সব কথোপকথন। আবার কোনো বইয়ের বর্ণনা বেশ ভালো লাগছে, কিন্তু গল্পে কোনো বাস্তবতা কিংবা আবেদন নেই। এমন করে করে অনেক বই আমার অসমাপ্ত থেকে যায়।
মনের মতো বইয়ের সংকটে পড়ে রিডিং ব্লক জেঁকে বসে। সে কি দমবদ্ধকর পরিস্থিতি। পড়তে চাইছি, অথচ কিচ্ছু পড়তে পারছি না, মন বসছে না, কোনো গল্পই ঠিক টানছে না পাঠক ‘আমি’কে। এমনই বিষণ্নতাময় পড়ন্ত এক বিকেলে আমার সঙ্গী হয় ‘দহনের দিনে জোছনার ফুল’। বইটা যখন হাতে নিয়েছি, তখনো আমি জানতাম না একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের হেঁশেলে এক কর্মব্যস্ত মায়ের কোনো এক আনমনা সকালের হাত ধরে শুরু হওয়া গল্পটা আমায় ঠিক কোথায় নিয়ে যাবে। আমি কেবল একটুখানি প্রশান্তির আশায় পথ চলেছি দহনের রাস্তায়। আর আমার সঙ্গী হয়েছিল জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার ঝাড়।
গল্পপাঠের এই যাত্রায় একটু একটু করে আমার সাথে পরিচয় হয়েছে কড়া শাসনের গণ্ডি ছেড়ে বেরুনো এক মুক্ত পাখি আধিরার, যে স্বাধীনভাবে পথচলার স্বপ্ন দেখে। ভুল থেকে শিখতে চায়, একটুতেই হতাশা নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের স্বপ্নপূরণের পথ চলতে চায়। আমার পরিচয় হয়েছে এক ভীষণ দায়িত্বশীল আকর্ষণীয় দেশপ্রেমিক তরুণ আদিত্যের সাথে, যার সাহসিকতা আর ব্যক্তিত্বে মোহাচ্ছন্ন আমি। মিষ্টি মেয়ে আদৃতাকে এখন আমি খুব ভালো করে চিনি। চিনি গহীন অরণ্যের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ইউরোপীয় ধাঁচে গড়া সেই চমৎকার বাংলো ‘সোলজারস ডেন’, আর এই বাংলোয় পরিবার নামক বন্ধনের সুতোয় জড়িয়ে থাকা স্বাপ্নিক মানুষগুলোকে।
দহনের এই পথচলায় কখনো প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মোহাবিষ্ট হয়েছি আমি, কখনো বা অনুভবের বৈচিত্র্যময় জালে জড়িয়ে গিয়েছি। ভালো লাগা, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, রাগ, অভিমান, আদ্রতামাখা মন আর খু নসুটি, এত এত অনুভূতি মনবদলে যেন মুগ্ধতার সায়রে ভেসে বেড়িয়েছি। গল্পের একেকটি চরিত্র, তাদের ব্যক্তিত্ব, পারস্পরিক বোঝাপড়া, পারিবারিক শিক্ষা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ত্যাগ, আত্মবিশ্বাস, স্বপ্নভঙ্গ, হতাশা, একাকীত্ব, বিষণ্নতা, প্রিয়জনকে ঘিরে দুর্ভাবনা সবকিছু এতবেশি জীবন্ত— পড়তে পড়তে কখন যেন নিজের অজান্তেই হয়ে উঠেছিলাম গল্পের অন্য এক চরিত্র।
★ চরিত্রকথন:
কিছু কিছু উপন্যাসে গল্প গড়ে ওঠে একটা আধটা চরিত্রকে ঘিরে। আবার কোনো কোনো উপন্যাস কেবল কেন্দ্রীয় চরিত্র নয়, বরং তাদের ঘিরে থাকা মানুষ আর তাদের জীবনের গল্পগুলোও তুলে ধরতে জানে।
ডা. আধিরা আহমেদ: মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সদ্য পাশ করে বের হওয়া ডাক্তার আধিরা আহমেদ। আপাতদৃষ্টিতে বেশ আবেগী অপরিপক্ক মানসিকতার মনে হওয়া এই মেয়েটি একটা সময় নিজের টনটনে আত্মসম্মানবোধ, দৃঢ়চেতা মনোভাব আর প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ব্যক্তিত্বের গুণে স্থান করে নিবে পাঠকের হৃদয়ে।
মেজর আদিত্য আহসান খান: স্নেহসুলভ নাম যার ‘সূর্য’, সত্যিই সে সূর্যের মতো নিজেকে দগ্ধ করে অন্যকে আলোকিত করার ক্ষমতা রাখে। প্রগাঢ় দেশপ্রেম বোধসম্পন্ন এই যুবকটির চারিত্রিক গুণাবলীর ব্যপী বড় বেশি বিস্তৃত, যা অল্পকিছু শব্দযুগলের মাধ্যমে প্রকাশ করা কঠিন। আত্মবিশ্বাসী, পরোপকারী, সহৃদয়বান এই যুবকটির যাবতীয় সকল গুণাবলীর মূলে রয়েছে তার পারিবারিক শিক্ষা। প্রতিটি পুরুষের জন্য আদিত্য এক আদর্শবান চরিত্র। সন্তান হিসেবে, ভাই হিসেবে, প্রেমিক পুরুষ হিসেবে, এই দায়িত্ববান সেনাকর্মকর্তা হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জীবনের আগে তার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ।
আদৃতা আহসান: সম্পর্কে আদিত্যের বোন ও আধিরার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী। ভীষণ রূপবতী, ফুলের পাপড়ির ন্যায় কোমলমতী, বিনয়ী ও বন্ধুত্বপরায়ণ মিষ্টি স্বভাবের এই মেয়েটি জীবনের এক চরম মুহুর্তে আবিষ্কার করে এক নতুন আদৃতাকে, যে সহসা ভয় পায় না, ভেঙে পড়ে না।
আদিব আহসান: সম্পর্কে আদিত্য-আদৃতার বাবা, পেশায় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মানুষ হিসেবে চমৎকার ব্যক্তিত্ব এবং বিচক্ষণ বোধ বোধসম্পন্ন। সন্তানদের সাথে রয়েছে দারুণ এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, দায়িত্ববান স্বামী ও সন্তান হিসেবে অনন্য। ভদ্রলোকের চারিত্রিক গুণাবলীর মাঝে সম্পর্কের মাঝে শ্রদ্ধাবোধ আর পারস্পরিক বোঝাপড়ার সদগুণটি আদিত্যের মাঝেও প্রকট।
আনিশা চৌধুরী: সম্পর্কে আদিত্য-আদৃতার মা এবং আদিব আহসানের সহধর্মিণী। এয়ার কমোডর আদিব আহসান অনুপস্থিতিতে পুরো সংসার আগলে রাখা, সন্তানদের মানুষ করার, সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার মতো গুরু দায়িত্ব ভদ্রমহিলা বেশ সুনিপুণ ভাবে পালন করেছেন। একজন মমতাময়ী মা, দায়িত্ববাধ স্ত্রী ও পুত্রবধূ হিসেবে তিনি সর্বগুণে গুণান্বিতা। তবে আনিশা চৌধুরীর ব্যক্তিত্বের যে দিকটি আমায় মুগ্ধ করেছে, কাউকে অপছন্দ করলে বা কোনো ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হলে তা কোনোভাবেই ওনার আচরণে প্রকাশ পায় না নিজের প্রখর বুদ্ধমত্তা ও ব্যক্তিত্বের গুণে।
জারিফ করিম: উপন্যাসের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়ে মানুষ হয়েছে চাচি-চাচির কাছে। খানিকটা বড় হতেই এক দুর্ঘটনা কারণ হয় তার স্বপ্নভঙ্গের। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আবার নিজেকে গুছিয়ে সামনে এগুনো। তবে প্রিয়জনকে ভালোবেসে দূর থেকে আগলে রাখার যে মহৎ গুণটি জারিফের মাঝে ফুটে ওঠেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
নুসরাত জাহান: উপন্যাসের অন্যতম মানবিক গুণসম্পন্ন আরেকটা চরিত্র এই নুসরাত জাহান। নিজের বেদনাবিধুর অতীত, একাকীত্ব, হতাশা, বিষণ্নতা সবকিছু একপাশে রেখে এতটাও নিঃস্বার্থ পরোপকার কেউ বুঝি হতে পারে? মানুষের সাহায্যে নিজেকে বিলীন করে তাতেই সুখ খুঁজে পাওয়া এই নারী চরিত্রটিকে আমার অনেক দিন মনে থাকবে। গর্ভে ধারণ না করেও যে মমতাময়ী মা হয়ে ওঠা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই নুসরাত জাহান।
‘দহনের দিনে জোছনার ফুল’ তেমনি একটি উপন্যাস, যেখানে মূখ্য চরিত্রের পাশাপাশি এসে মিশেছে অসংখ্য চরিত্র। কোনো চরিত্রের ভূমিকাই এখানে নগণ্য নয়, তাদের সবারই আছে নিজস্ব একটা করে গল্প। দাদাজান আসিফ আহসান, আধিরার মা আহিরা সুলতানা, বাবা আফসার আহমেদ, দাদিমা আমিনা বেগম, আদিত্যর বন্ধু সাদমান, ইশমাম, সানজিদা, ফাতিমা, বোবা সালামসহ আরো অনেক চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে এই দুই মলাটের গহীনে।
সবগুলো চরিত্রই মহৎ কিংবা মুগ্ধতাজাগানিয়া নয়। বরং কিছু কিছু চরিত্রের কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা, অমানবিক পৈশাচিক কর্মকাণ্ডে রাগে ঘেন্নায় গা গুলিয়ে আসে। বারবার মনে হবে কোনো মানুষ কী করে এতটা খারাপ হয়ে পারে? কিন্তু সত্যি তো এটাই আমার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন অজস্র মুখোশদারী মানুষ। আর বাস্তবতার এই নি র্মম সত্য তুলে ধরতেই দহনের দেয়ালে র ক্তক্ষরণ করতে আগমন ঘটে এই চরিত্রদের।
★ বইটি কেন পড়া দরকার:
জীবন খুব সুন্দর, গোছানো, পরিপাটি। কিন্তু সেই জীবনই পরিস্থিতির বশবর্তী হয়ে আমাদের কখন কোথায় নিয়ে যাবে আমরা কেউ জানি না। তাই সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে, হতে হবে বিচক্ষণ। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতাটি বড় বেশি প্রয়োজন এই অস্থি তিশীল জীবনে।
‘দহনের দিনে জোছনার ফুল’ কেবল কোনো সামাজিক বা রোমান্টিক উপন্যাস নয়। জীবনের এই গল্পে উঠে এসেছে মহান মুক্তিযু দ্ধে বিলীন হয়ে যাওয়া এক পরিবারের হৃদয় ভারাক্রান্ত গল্প, রোহি ঙ্গা শরণার্থীদের নিপীড়ন ও দেশান্তরের ইতিহাস, নাফ রক্ষা অপারেশন, ছোট্টদেশ বাংলাদেশের এতো বিপুল সংখ্যক রোহি ঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়া, অভাবের তাড়নায় বেড়ে যাওয়া মা দকদ্রব্য চোরা চালান, মান বপাচার, ধর্ষ ণ, গুম, খু ন, হত্যার মতো নানা অন্যা য় অ পরাধ, দেশের সেবায় নির্ভীকচিত্তে দায়িত্বপালনরত অতন্দ্র প্রহরী বাংলার সূর্য সন্তানদের ত্যাগ, সাহসিকতা আর বীরগাঁথা। সেই সব ইতিহাস, আত্মত্যাগ আর সাহসিকতার গল্প জানতে হলেও পড়তে হবে ‘দহনের দিনে জোছনার ফুল’ উপন্যাসটি।
★ কারা পড়তে পারবে:
আমার মতে প্রাপ্তমনস্ক যেকোনো মানুষ এই উপন্যাসকি পড়তে পারবে। সবার অবশ্যই পড়া উচিত। আমার ব্যস্ততম ক্লান্তিকর দিনের শেষে এক টুকরো স্বস্তি, প্রশান্তি আর ঠোঁটের কোণের দুষ্টু মিষ্টি হাসির পেছনে অবদান ছিল আধিরা আদিত্যের সেই ঝগড়ামুখর সময়গুলো, দাদাজানের সাথে খুনসুটি, আদিত্যের প্রখর সেন্স অফ হিউমার।
গল্পের শুরু থেকে শেষ অবধি প্রকৃতির কি অপরূপ দৃশ্যায়ন ঘটেছে লেখকের কলমে তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। উপমা ও রূপকের যথাযথ ব্যবহারে এতো নিখুঁত বর্ণনা, দৃশ্যায়ন, চিত্রায়ন চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিল প্রকৃতির ছোটবড় প্রতিটি রঙ, রূপ আর সৌন্দর্য। চরিত্রদের মানবিকবোধ, ব্যক্তিত্ব যেন পাঠককে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। কী করে সম্পর্কের টানাপোড়েন মনোমালিন্য মেটাতে হয়, কী করে সবাই আগলে রেখে ভালোবাহতে হয়। প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ গুণসম্পন্ন স্বকীয়সত্তা, তাই প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দকৃত পৃথক পৃথক শ্রদ্ধার স্থান। যেকোনো অনাকা ঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা, দায়িত্ববোধের এক পূর্ণাঙ্গ রূপ ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। ভুল ঠিক মিলিয়েই মানুষ। তবু অনুতাপ, সংশোধনেরও সুযোগ থাকা উচিত। অনুভব আর উপলব্ধির বুননেই যে টিকে থাকে জীবন।
★ উপন্যাসের ইতিবাচক ও বাস্তবভিত্তিক দিকগুলো:
‘দহনের দিনে জোছনার ফুল’ উপন্যাসটিতে বেশ অনেকগুলো বিষয় আমার মনে দাগ কেটেছে।
• কেবল পারিবারিক বন্ধন, ভালোবাসা কিংবা দেশপ্রেম নয়, আমাদের বাস্তব জীবনে এই সমাজে ছত্রাকের ন্যায় বেড়ে ওঠা অনালোচিত অনালোকিত বেশ কিছু লেখক যেন উপন্যাসের পরতে পরতে গেঁথে দিয়েছেন।
এই যেমন- বডি শেইমিং এর মতো বহুল চর্চিত একটি বিষয় যা একটা মানুষের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে একাই যথেষ্ঠ। একটা মানুষের বাহিক সৌন্দর্য কিংবা কোনো প্রকার অসংগতি অসম্পূর্ণ তার পিছনের তার নিজের কোনো হাত থাকে না। স্রষ্টার প্রতিটি সৃষ্টিই নিজ নিজ গুণে সুন্দর। তবু এই সমাজে কিছু মানুষের বড্ড বড়াই, একপেশে চিন্তাভাবনা অন্যকে ছোট করার। মানুষ বিচারের মানদণ্ড কখনোই তার বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং তার যোগ্যতা ও মানবিক গুণাবলী হওয়া উচিত।
• মেরিটাল রে পের মতো আরেকটি অনালোচিত বিতর্কিত ইস্যুতে আলোকপাত করেছেন লেখক। এই ধরণের সমস্যা গুলো নিয়ে আমরা সহসা আলোচনা করি না, প্রতিবাদ করি না। ফলাফল স্বরূপ দিনের পর দিনের অন্যায় অত্যাচার বেড়েই চলে। এর বিরূদ্ধে সোচ্চাপূর্ণ অবস্থান লেখক তুলে ধরেছেষ উপন্যাসের একটি অধ্যায়ে।
• পরিবারের দায়িত্বের নামে বড় সন্তানের কাঁধে যে বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয় এই ঘটনা আমাদের কাছে নতু কিছু নয়। প্রায়শই এমন গল্প শোনা যায়। কিন্তু সেই বড় সন্তানও যে মানু, তারও অধিকার আছে নিজের মতো একটা সুন্দর জীবন গড়ার, জীবন উপভোগের, কোনো কোনো পরিবার এই ব্যাপারটাই ভুলে যায়।
• রাগ কিংবা ভুল বোঝাবুঝির সময়ে সম্পর্কে ‘ইগনোর’ শব্দটার জায়গা না দিয়ে খুব সুন্দর বোঝাপড়া আর যুক্তির মাধ্যমে সহজ সমাধানে আসার প্রচেষ্ট।
• পরিবারে গুরুজনদের সিদ্ধান্ত যেমনই হোক না কেন, শ্রদ্ধার জায়গাটা অটুট রাখা।
• অতীত মনে রেখে বর্তমানটা নষ্ট না করা, বরং সবার সাথে সুন্দর স্বাভাবিক একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
এমন ছোটোখাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু গল্পের প্রয়োজনে আলোচনায় উঠে এসেছে। গল্পপাঠের যাত্রায় সেইসব উপলব্ধি পাঠককে ভাবনায় ফেলে দেবে।
( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,সামিহা হুসাইন শৈলী, বই: দহনের দিনে জোছনার ফুল , লেখক: আফিফা পারভীন)
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।