তেতুল বনে জোছনা হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ‘ তেতুল বনে জোছনা হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
তেতুল বনে জোছনা হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ তেতুল বনে জোছনা হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুক রিভিউ
“তেতুল বনে জোছনা” উপন্যাসটি হুমায়ুন আহমেদ এর অনবদ্য একটি সৃষ্টি। ডাক্তারবাবুকে নিয়ে উক্তিটি শুনেনি এমন লোক হয়তো খুব কমই আছে।
উপন্যাসের নায়ক আনিস,পেশায় ডাক্তার। ঢাকার কলাবাগানে থাকা আনিস চাকরির সুবাদে এখন থাকে বিরাটনগর নামক গ্রামে। সেখানে সে “সাইকেল ডাক্তার” নামে পরিচিত।
গ্রামের নাম বিরাটনগর,কাহিনির শুরুও বিরাট আকারের টর্নেডো দিয়ে।
আনিস গ্রামের মানুষের কাছে বেশ সুপরিচিত। গ্রামের মানুষেরা মনে করে আনিসের সাইকেলের ঘন্টা শুনলেই যেকোন রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
আনিস অবসরে এসে শ্মশানঘাটে নির্জনে বসে,একান্তে তার স্ত্রী নবনীর কথা ভাবে। সপ্তাহে দুদিন নবনী তার কাছে চিঠি লিখে। সে চিঠিগুলো এখানে এসেই পড়ে। আনিস মানুষ হিসেবে পরোপকারী,সহজ,সরল,নির্ভেজাল ধরনের।
গ্রামের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন খাঁ বিরাট ধূর্ত। সে নিজের বাসায় হেনা নামক একটি মেয়েকে রেখে মেয়েটিকে নিজের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায় আবার ইমাম সাহেবকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অপমান করে। কেউ তার থেকে বেশি উন্নতি করলে সে সেটা মেনে নিতে পারেনা।
অপমান সহ্য করতে না পেরে ইমাম সাহেব মসজিদের পাশের তেতুল গাছের সাথে ফাঁস লেগে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা করেছেন বলে তার জানাজা পড়াও হয় না। তারপর থেকেই গ্রামের মানুষেরা রাত হলেই ইমাম সাহেবের আত্মার অস্তিত্ব পায়। ইমাম সাহেবের আত্মা সবাইকে বলে উনার জানাজা পড়াতে।

এই অবস্থায় গ্রামে আসে নবনী,আনিসকে তার কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানাতে। নবনীর সাথে আনিসের পরিচয় অদ্ভুতভাবে। তারা একে অপরের বিপরীত। আনিস যেমন শান্ত,কথা কম বলে,নবনী তেমন কথা বলতে ভালোবাসে। নবনী একাকীত্বে ভোগে। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। নবনী বুঝতে পারে আনিসের সাথে তার বিয়েটা ঠিক কাজ করছেনা।
তেতুল বনে জোছনা হুমায়ূন আহমেদ
নবনী-আনিসের দাম্পত্য জীবনের ঠিক বিপরীতে আনিসের মা বাবার দাম্পত্য জীবন। তারা একে অপরের সাথে ঝগড়া করে,কথা বলা বন্ধ করে দেয় কিন্তু আবার একে অপরকে ছেড়ে থাকতেও পারেনা।
গল্পের আরেক মজার চরিত্র মতি মিয়া। পেশায় কুলি মতি মিয়া জীবন চালায় মূলত চুরি করেই। ডাক্তার আনিসকে সে সম্মান করে আবার আনিসের জামাকাপড়,সাইকেল চুরি করে। ইমাম সাহেব মারা যাওয়ার পর সবাই যখন চলে যায়,মতি মিয়া একা থাকে ইমাম সাহেবের মৃতদেহের পাশে। আনিসের কষ্টের কথা ভেবে তার চুরি করা সাইকেল সে ফিরিয়ে দেয়। আসলে দোষ গুণ নিয়েই মানুষ। তাই আমার কাছে মতি একজন প্রকৃত মানুষ।
ইমাম সাহেবের আত্মার রহস্য কি? কি হয় আনিস নবনীর দাম্পত্য জীবনের ভবিষ্যৎ? প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে।
আমার পছন্দের কিছু লাইন-
– কিছু কিছু মানুষ বিচিত্র ধরনের নিঃসঙ্গতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কারো সাধ্য নেই সেই নিঃসঙ্গতা দূর করে।
– ডাক্তার সাহেব,তুমি আমার জন্যে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ- তার প্রতিদানে আমি “জনম জনম কাঁদিব”।
– আল্লাহপাক এত সহজে রাগ করেন না। কিন্তু মানুষ রাগ করে। আমরা এমন যে মানুষের রাগটাকেই বেশি ভয় পাই।
বইটি পড়ার কারণ “নবনী” নামটি। বইটি পড়তে গিয়ে উপলব্ধি করলাম ছেলেমেয়েদের জীবনে মা বাবার দাম্পত্য জীবনও প্রভাবে ফেলে। নবনীর মা বাবার অসফল দাম্পত্য জীবনের জন্যেই নবনী হয়তো একাকীত্বে ভোগে,তার নিজের দাম্পত্য জীবনকে সহজভাবে নিতে পারছিল না। এটা আমার একান্ত উপলব্ধি।
( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,নবনীতা দত্ত তিথি, বইয়ের নামঃতেতুল বনে জোছনা , লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ )
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ তেতুল বনে জোছনা হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।