জোসনা ও জননীর গল্প হুমায়ুন আহমেদ বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ‘ জোসনা ও জননীর গল্প হুমায়ুন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
জোসনা ও জননীর গল্প হুমায়ুন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ জোসনা ও জননীর গল্প হুমায়ুন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হুমায়ুন আহমেদ বুক রিভিউ
(একটি ভালো বই হলো বর্তমান ও চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু “- টুপার সত্যিই তাই! বইয়ের সাথে পার্থিব কোনো সম্পদের তুলনা হয়না। বই মানুষের আত্নার খোরাক।একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনো নিঃশেষ হয়না, তা চিরকাল অন্তরে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে।এই লকডাউনে সবথেকে বেশি যে জিনিসটার সংস্পর্শে থাকা হয়েছে তা হচ্ছে বই।
এই সবকিছুর বিবেচনায় নিজের পড়া এবং নিজের পছন্দের নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জোছনা ও জননীর গল্প বইটির রিভিউ তুলে ধরছি – ২০০৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসটি। এটি এতোই জনপ্রিয় ছিলো যে ২০০৮ সালে তা বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারাবাহিকভাবে সম্প্রচার শুরু হয় । ৫০৫ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটিকে আমি বলবো একটা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। অবশ্য ইতিহাস বলার পেছনে যুক্তিযুক্ত একটা কারণ আছে।)
উপন্যাসটিতে কাহিনী বিন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে ব্যবহার করা হয়েছে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলের পনেরো খণ্ডের বেশ কিছু অংশ এবং এই প্রত্যেকটা অংশই উপন্যাসটির মূল কাহিনীর সাথে এতোটাই সঙ্গতিপূর্ণ যে মুক্তিযু্দ্ধের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছিলাম।এছাড়া উপন্যাসটিতে চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে তৎকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী।আর কাল্পনিক চরিত্রগুলো শাহেদ,আসমানী,রুনু,গৌরাঙ্গও মনে দাগ কেটে আছে।
বইটির পরিশিষ্ট অংশে মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণ তালিকা সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে এই পুরো বইটি হয়ে উঠেছে একটা ইতিহাস। “যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আমরা যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছি। আর ভয় নাই” পুরো উপন্যাসটির সারমর্ম এই তিন লাইনেই ফুটে ওঠে। মূলত জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এবং শেষ হয়েছে ঠিক ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে। অর্থাৎ দৃশ্যপট হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা।

জোসনা ও জননীর গল্প বুক রিভিউ
এতে কোনো প্রধান চরিত্র নেই।যেহেতু চরিত্র চিত্রণে বরাবরই হুমায়ুন আহমেদের একচ্ছত্র আধিপত্য সেহেতু জোছনা ও জননীর গল্পেও লেখক স্বচ্ছ সংলাপই ব্যবহার করে এসেছেন।মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের মধ্যে বেশ কিছু চরিত্রের উত্থান-পতন, আন্তঃসংযোগ, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, এবং পরিণতি নিয়ে পুরো কাহিনী এগিয়েছে তার নিজস্ব স্রোতে।আর এই উপন্যাসের এক অনন্য দিক হলো, যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে না ধরে তৎকালীন সময়ের দেশের সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের চিত্রায়ণ করা হয়েছে বেশি।
যার কারণে বইটি পড়ার সময় সহজেই যুক্ত হতে পেরেছি চরিত্রগুলোর সঙ্গে।আক্ষরিক অর্থে, লেখক উপন্যাসটিতে দেশকেই মূল চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই উপন্যাস শেষে কমবেশি পূর্ণতা লাভ করেছে ।আর চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণ দেখে মনে হয়েছে সেই সময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে হারিয়ে গেছি। আবার এই পুরো উপন্যাসটিতেই বেশিরভাগ ঘটনা ঢাকা এবং নীলগঞ্জের পরিবেশে রচিত হয়েছে।
নীলগঞ্জের ঘটনাগুলোর মধ্যে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় “নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক মাওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরীর কথা”।তিনি কখনোই চাননি দেশ স্বাধীন হোক।তার মতে দেশ স্বাধীন হলে দেশের মানুষকে হিন্দুদের গোলামি করতে হবে।অথচ সেই লোকটিকেই নীলগঞ্জে অবস্থানরত মিলিটারি বাহিনীর ক্যাপ্টেনের নির্দেশে সোহাগী নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করা হলো। কি অদ্ভুত চিত্রণ! আবার এই উপন্যাসের কাল্পনিক দুটি চরিত্র শাহেদ ও আসমানীর কথা না বললেই নয়! ছোট্ট মেয়ে রুনুকে নিয়ে একটা খুনসুটির সংসার তাদের।একদিন রাগ করে আসমানী তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
সেই যে বের হলো আর ফিরলো না।কারণ সেদিন ছিল ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের সেই কালরাত।নির্মমতা কিভাবে সেই রাতটাকে কালরাত করেছিলো তার উদাহরণ উপন্যাসের এই চরিত্রেই পাওয়া যায়। “জোছনা ও জননীর গল্প ” উপন্যাসে জননী হলো আমাদের “সোনার বাংলাদেশ” আর আর জোছনা হলো লাখো প্রাণের তাজা রক্ত আর আমাদের মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া “স্বাধীনতা”। এই জোছনা তার জননীকে পূর্ণতা দিয়েছে!
অর্থাৎ স্বাধীনতা এই দেশের প্রতিটি মানুষকে দিয়েছে নতুন করে বাঁচার আকাঙ্খা! হুমায়ুন আহমেদের এই বইটি আমাকে নিয়ে গেছে সেই ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে।বইটির প্রতিটি ঘটনা আর প্রতিটি চরিত্রের চিত্রায়ণে আমি পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ! পুরো উপন্যাসটি আমাকে তৎকালীন পরিবেশ সম্পর্কে একটি বিশদ ধারণা দিয়েছে।
তাই পরিশেষে ষোলই ডিসেম্বরে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করার পরে বাঙালিদের উল্লাসের সেই লাইনগুলো লিখেই শেষ করছি জোছনা ও জননীর গল্প বইটির রিভিউ – “ঢাকা শহরের সব মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়েছে। যার যা ইচ্ছা করছে। চিৎকার, হৈ-চৈ, লাফালাফি। মাঝেমধ্যেই আকাশ কাঁপিয়ে সমবেত গর্জন ‘জয় বাংলা’। প্রতিটি বাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ছে। এই পতাকা সবাই এতদিন কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল কে জানে?” মোটকথা,আমরা নতুন প্রজন্ম যারা কখনো মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাদের কাছে জোছনা ও জননীর গল্প বইটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।
( কৃতজ্ঞ = বুক রিভিউ মহিমা সরকার মিম, বইঃ জোসনা ও জননীর গল্প, লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ)
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ জোসনা ও জননীর গল্প হুমায়ুন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।