ভোলার মেয়ে ফাতেমা বেগম (৪০)। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কাজ পান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে গৃহপরিচারিকা হিসেবে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার ১৬ বছরের এক অনন্য ভক্তি ও সেবার যাত্রা।
ফাতেমা শুধু একজন গৃহপরিচারিকা নন, বেগম জিয়ার নিকটজন, বিশ্বস্ত সহচর। ২০১৮ সালে বেগম জিয়ার কারাবন্দিত্বের সময় স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে কারাগারে ছিলেন ফাতেমা। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হলেও, নিজের অবস্থানে ছিলেন অটল। বেগম জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হলে, সেখানেও সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকেন তিনি।
২০১৩ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলনে গুলশান কার্যালয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল বেগম জিয়াকে, তখনও তাকে পাশে দেখা যায় পতাকা হাতে। এমনকি সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া, সেখানে সফরসঙ্গী হিসেবেও ছিলেন ফাতেমা।
ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের শাহ-মাদার গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম রফিজল হক ও মালেকা বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড়। ২০০৩ সালের শেষ দিকে বিয়ে হয় হারুন লাহাড়ির সঙ্গে। মেঘনার চরে চাষাবাদ করে চলছিল সংসার, কিন্তু ২০০৮ সালে হারুনের মৃত্যু ফাতেমার জীবন বদলে দেয়। তখন তার মেয়ে জাকিয়া ইসলাম রিয়া (১৯) ও ছেলে মো. রিফাত (১৬) খুব ছোট। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ২০০৯ সালে ঢাকায় আসেন এবং শুরু হয় তার গৃহপরিচারিকার জীবন।
বেগম জিয়ার বাসভবনে কাজ করার পাশাপাশি তিনি তার ওষুধ খাওয়ানো, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার ঘনিষ্ঠ মহলে বিশ্বস্তজন হিসেবে পরিচিতি পান ফাতেমা।
তবে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে ফাতেমা ও তার পরিবারকেও চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। তার বাবা রফিজল হক ঢাকায় চায়ের দোকান চালাতেন, কিন্তু মেয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকার কারণে তার দোকান দুই দফা ভাঙচুর করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা। বাধ্য হয়ে তিনি ভোলায় ফিরে আসেন।
ফাতেমার সন্তানরা জানান, মায়ের আদর খুব একটা না পেলেও তারা মাকে নিয়ে গর্বিত। তারা বলেন, “আম্মু আমাদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে সেবা করছেন এটাই আমাদের গর্ব। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ বেগম জিয়াকে সুস্থতা দিন, আর আম্মুকে শক্তি দিন তার পাশে থাকার।”
স্থানীয়রাও ফাতেমাকে নিয়ে গর্বিত। তারা বলেন, “জিয়া পরিবারে ভালোবাসা থেকেই ফাতেমা তার সবটুকু দিয়ে সেবাযত্ন করে যাচ্ছেন। তার এই উদারতায় আমরা সবাই গর্বিত।”