নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগের পাহাড়। সৌদি প্রবাস থেকে ফিরে সাবেক এমপি সংগ্রামের হাত ধরে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দ্রুতই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জড়িয়ে পড়েন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও টেন্ডারবাজির মতো গুরুতর অপরাধে। তার ছিল অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী, যার ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস করতেন না।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে করা, ও ৯০ শতাংশের বেশি ভোট দেখানোর মতো গুরুতর অনিয়মের তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারা হয়, এবং যেকোনো প্রতিবাদকে দমন করতে সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহৃত হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় একাধিক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সাখাওয়াত আত্মগোপনে চলে যান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও তিনি এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরদিন, ৪ আগস্ট, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে শটগান দিয়ে গুলি চালান তিনি।
স্থানীয় যুবলীগের এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাত হলেই কুন্ডার বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের নিয়ে মদের আসর বসত, যা এক ধরনের সন্ত্রাসী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ নিয়েছিল। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তারাও সেখানে অংশ নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট তার বাড়ি জনরোষে ভাঙচুরের শিকার হওয়ার পর তিনি বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।
সাখাওয়াতের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সাবেক এমপি সংগ্রামের ছত্রছায়ায় তিনি হয়ে ওঠেন হাজার কোটি টাকার মালিক। রয়েছে মাছের কোম্পানি, পণ্যবাহী জাহাজ, একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি। ঢাকায় তার রয়েছে ১০-১২টি বহুতল বাড়ি, বিভিন্ন স্থানে জমি ও গ্রামের বাড়িগুলো আলিশান প্রাসাদের মতো।
সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এখনো তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।