আগুনের পরশমণি হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ , বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ও আবেগঘন উপন্যাস হলো “আগুনের পরশমণি”। হুমায়ূন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে সাধারণ মানুষের অনুভূতির সঙ্গে মিশিয়ে উপস্থাপন করেছেন, তা পাঠকের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে। এই উপন্যাস শুধু একটি গল্প নয়, বরং এটি আমাদের বীরত্বের, ত্যাগের এবং সংগ্রামের এক অনন্য দলিল।
আগুনের পরশমণি হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ আগুনের পরশমণি হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুক রিভিউ
হুমায়ূন আহমেদ একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক।
“আগুনের পরশমণি” উনার বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস।
“জুলাই মাসের ছ’ তারিখ। বুধবার। উনিশ শো একাত্তুর সন। একটি ভয়াবহ বছর। পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর কঠিন মুঠির ভেতরে একটি অসহায় শহর। শহরের অসহায় মানুষ।”
এমন এক পরিস্থিতিতে মতিন সাহেবের বাসায় আগমন ঘটে বদিউল আলম নামক এক যুবকের।
“বদিউল আলম গেট ধরে দাঁড়িয়েছে। সে শহরে ঢুকেছে সাতজনের একটি ছোট্ট দল নিয়ে। শহরে গেরিলা অপারেশন চালানোর দায়িত্ব তার।”

মতিন সাহেব খুবই সাধারণ একজন মানুষ যার চোখে আছে স্বাধীন দেশ দেখার স্বপ্ন। স্বাধীন বাংলা বেতার শুনলে উনার রক্ত গরম হয়ে উঠে। রাত্রি, অপালা দুই মেয়ে, উনার স্ত্রী সুরমা এবং কাজের মেয়ে বিন্তিকে নিয়েই উনার ছোট্ট সংসার।
আগুনের পরশমণি হুমায়ূন আহমেদ
একাত্তরের যুদ্ধের সময় সাংসারিক সাধারণ অনেক মানুষেরাও কিভাবে অগোচরে থেকে এদেশের জন্য লড়াই করে গেছেন তার উদাহরণ মতিন সাহেব। তিনি নির্বিঘ্নে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন গেরিলা দলের লিডার আলমকে।
প্রথম দিকে উনার স্ত্রী সুরমা আপত্তি জানালেও খানিক পরে উনি নিজেও আলমের প্রতি সন্তানস্নেহ অনুভব করেন। এমনকি যখন বুঝতে পারেন উনার বড় মেয়ে রাত্রির মনে আলম জায়গা করে নিয়েছে উনি রাত্রিকে আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারেন নি।
রাত্রির প্রতি হালকা দুর্বলতা আলমের থাকলেও তার মন মস্তিষ্কে তখন চলছিল দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন। সে চিন্তা করছিল,
“গুজবে ভর্তি হয়ে গেছে ঢাকা শহর। মানুষের মরাল ভেঙ্গে পড়েছে। ঢাকা শহরের গেরিলাদের প্রথম কাজই হবে এই মরাল ঠিক করা। নতুন ধরনের গুজবের জন্ম দেয়া। যা শুনে একেকজনের বুকের ছাতি ফুলে উঠবে। এরা রাতে আশা নিয়ে ঘুমুতে যাবে।”
আলমের গেরিলা বাহিনিদের মধ্যে ছিল সদাহাস্যজ্বল তরুণ সাদেক, রহমান, নূর, নাজমুল, গৌরাঙ্গ এবং আশফাক। তাদের অদম্য সাহসে প্রথম অপারেশনে তারা সফল হয়। দৃপ্ততার সাথে সবাইকে জানান দিয়ে দেয় ঢাকা শহরে গেরিলা বাহিনি ঢুকে পড়েছে, পাকিস্তানিদের আর নিস্তার নেই।
কিন্তু দ্বিতীয় অপারেশনের সময় পাকিস্তানিদের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। সাদেক এবং নূর শহীদ হয়। অপরদিকে আলম গুলিবিদ্ধ হয়। আলমকে মতিন সাহেবের বাসায় রেখে ডাক্তার আনার সময় পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে যায় আশফাক।
মেজর রাকিব আশফাকের উপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। আশফাকের হাতের দুই আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়। শেষমেশ তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর নাম নিয়েও ভয় দেখায় আশফাককে। কিন্তু আশফাক দৃঢ়চিত্তে বলে উঠে সে কখনোই তার সঙ্গীদের ঠিকানা বলবে না। মৃত্যুকে ভয় পেত আশফাক, ভালোবাসত তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে কিন্তু দেশের জন্য শহীদ হতে সে পিছপা হয় নি।
অন্যদিকে আলমের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। রক্তপাত বন্ধ হওয়ার নাম নেই উপরন্তু কারফিউয়ের কারণে ডাক্তার ডেকে আনার উপায় ও নেই। দীর্ঘ রাতটি কাটার অপেক্ষায় বসে থাকে মতিন সাহেবের পুরো পরিবার। কিন্তু আলম কি দেখতে পায় নতুন সূর্য?
লেখক এখানে অস্পষ্টতা রেখেই উপন্যাস শেষ করেন। আমার কল্পনায় আমি সুরমার মতোই ধরে নিলাম, আলম সুস্থ হয়ে উঠে। একদিন সুরমা আলমের মায়ের কাছে গিয়ে বলেন, আলমকে উনাদের দিয়ে দিতে। একদিন আলম এবং রাত্রির বিয়ে হয়।
লেখক হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে একটি “আগুনের পরশমণি”। ১৯৯৪ সালে তারই পরিচালনায় নির্মিত হয় এ উপন্যাসভিত্তিক চলচ্চিত্র। যেখানে মতিন সাহেবের ভূমিকায় অভিনয় করেন অভিনেতা আবুল হায়াত, রাত্রির ভূমিকায় অভিনয় করেন তারই সুযোগ্য কন্যা বিপাশা হায়াত এবং আলমের ভূমিকায় অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর সাহেব।
ঢাকায় গেরিলা বাহিনির তৎপরতা, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনগণের নানা ধারণা, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ সবকিছুই বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসে।
আমার লেখা শেষ করব কবিগুরুর গানের দুইটি লাইন দিয়ে যেখান থেকে নেয়া হয়েছে উপন্যাসের নামটুকু।
” আমার এই দেহখানি তুলে ধরো।
তোমার ঐ দেবালয়ের প্রদীপ কর।।”
এমন হাজারো দেহের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি আমাদের দেবালয়, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ।
( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,নবনীতা দত্ত তিথি ,বইয়ের নামঃ আগুনের পরশমণি ,লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ)
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ আগুনের পরশমণি হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।