হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুক রিভিউ
হুমায়ূন আহমেদ একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম।
“হিমু” চরিত্র হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য সৃষ্টি। কারো কাছে চরিত্রটি এত প্রিয় যে তারা হিমু হওয়ার বাসনা রাখে। আবার কারো চরিত্রটি অর্থহীন, কারণ ভবঘুরে হয়ে আর যা-ই হোক এই সমাজ সংসারে টিকে যায় না। তাদের কাছে হিমু বাস্তববাদী নয়। কিন্তু সত্যিই কি হিমু বাস্তববাদী নয়?
আমার কাছে হিমু চরিত্রটি আমার মন ভালো করার পন্থা। তাছাড়া হিমুর নানা কথাবার্তা এবং আচার আচরণ এর মাধ্যমে সে সমাজের নানা অসঙ্গতিকেও তুলে ধরে।

উপন্যাসের শুরু এক চমৎকার সকাল দিয়ে। শহরের রাস্তায় তখন হরতাল চলছে। হিমু হেঁটে চলেছে সকালটা উপভোগ করতে করতে। তখন হিমুর সাথে দেখা হয় মারিয়ার, হিমুর “মরিয়ম” এর। পাঁচ বছর আগে মারিয়া হিমুকে ভালোবেসে একটি সাংকেতিক ভাষায় প্রেমপত্র দিয়েছিল। তারপর হিমু আর মারিয়ার আর দেখা হয় নি।
হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম হুমায়ূন আহমেদ
পাঁচ বছর পর যখন মারিয়ার আবার দেখা হলো হিমুর সাথে, তখন সে বাস্তববাদী হয়ে নিজের অনুভূতি গুলোকে লুকিয়ে নিজেকে হিমুর সামনে শক্ত রাখার হাজারো চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভালোবাসায় শুধু আবেগ কাজ করে, বাস্তবতা নয়। উপন্যাসের শেষাংশে মারিয়ার চোখের জলই প্রমাণ করে দেয় সে তার প্রথম প্রেম হিমুকে ভুলতে পারেনি।
উপন্যাসের মাঝে আরো যে দুটো চরিত্র উঠে আসে সেগুলো হল পত্রলেখক আলী আসগর সাহেব এবং মারিয়ার বাবা আসাদুল্লাহ সাহেব।
আসগর সাহেব অতি কষ্টের জীবনযাপন করে তার দুই ভাইকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তারা চায় আসগর সাহেব যেন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এখন আরামের জীবন কাটান। কিন্তু আসগর সাহেব যেতে পারছেন না। কারণ মনসুর নামক এক ব্যক্তি উনার কাছে কিছু টাকা রেখে আর ফিরে আসেনি। তিনি বিগত সাত বছর ধরে মনসুরের ফেরার অপেক্ষা করছেন। এর থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি কতোটা সৎ, নিষ্ঠাবান এবং কর্তব্যপরায়ণ। সারাজীবন খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করার দরুণ শেষমেশ তাকে আলসারে ভুগতে হয়। তিনি বুঝতে পারেন তার মৃত্যু অতি সন্নিকটে। তবে তিনি কি সত্যিই আর অপারেশন থিয়েটার থেকে ফেরত আসেন নি সে ব্যাপারে লেখক আর জানান নি।
আসাদুল্লাহ সাহেব হিমুর দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। লোকটি এককালে বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। বইয়ের দোকানের সামনেই হিমুর সাথে উনার প্রথম আলাপ। পাঁচ বছর পর হিমু যখন আবার উনার সাথে দেখা করতে যায় সে উনার মাঝে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে। আসাদুল্লাহ সাহেব হিমুকে বলেন তার “নীলপদ্ম থিওরি”।
– ” সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি প্রতিটি ছেলেমেয়েকে পাঁচটি অদৃশ্য নীলপদ্ম দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। সে যদি কাউকে ভালোবাসে তবে তার নীলপদ্মগুলো তার ভালোবাসার মানুষকে দিয়ে দেয় এবং এরপর সে আর কাউকে ভালোবাসতে পারে না।”
উপন্যাসের নাম “হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম” মূলত এই থিওরি থেকেই। হিমুর হাতের নীলপদ্মগুলো হিমুকে কে দিয়েছিল??
উপন্যাসে আমার পছন্দের কিছু লাইন-
– “মানুষ তার জীবনে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি বার শুনে তা হলো নিজের নাম আর পৃথিবীর দ্বিতীয় মধুরতম শব্দ ‘ভালোবাসি’ “।
– “কয়েক মূহুর্তের জন্য আমার ভেতর এক ধরনের বিভ্রম তৈরী হল। মনে হল আমার আর হাঁটার প্রয়োজন নেই। মহাপুরুষ না, সাধারণ মানুষ হয়ে মমতাময়ী এই তরুণীটির পাশে এসে বসি। যে নীলপদ্ম হাতে নিয়ে জীবন শুরু করেছিলাম, সেই পদ্মগুলি তার হাতে তুলে দেই। তারপরই মনে হল- এ আমি কী করতে যাচ্ছি! আমি হিমু – হিমালয়। ”
– “মাঝে মাঝে খুব একা লাগে,বুঝলি? আমার সঙ্গে কী আছে জানিস? পদ্ম। নীলপদ্ম। পাঁচটা নীলপদ্ম নিয়ে ঘুরছি। কী অপূর্ব পদ্ম! কাউকে দিতে পারছি না। দেয়া সম্ভব নয়। হিমুরা কাউকে নীলপদ্ম দিতে পারে না। ”
, ( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,নবনীতা দত্ত তিথি, বইয়ের নামঃ হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম , লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ )
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।