বুড়িগঙ্গা নদী কোন নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ঢাকা নগরী ১৯১০ সালে বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠে, বুড়িগঙ্গা নদী বাংলাদেশের ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক নদী। এটি মূলত ধলেশ্বরী নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ঢাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গেই মিলিত হয়েছে। তাই বলা যায়, বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকা শহরের তীরে এবং এর সংযোগস্থল হলো ধলেশ্বরী নদী।এই নদীটি প্রাচীনকালে ঢাকার বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বুড়িগঙ্গা নদী কোন নদীর তীরে অবস্থিত
ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মুঘল আমলে ঢাকার বিকাশ শুরু হয়। এটি তৎকালীন সময়ে বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম ছিল। বুড়িগঙ্গা নদী বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নদী। এটি শুধু একটি জলধারা নয়, বরং ঢাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে দেশের রাজধানী ঢাকা শহর। তাই প্রশ্ন ওঠে— বুড়িগঙ্গা নদী কোন নদীর তীরে অবস্থিত? সহজভাবে বললে, বুড়িগঙ্গা নদী ধলেশ্বরী নদীর শাখা নদী এবং এটি ঢাকা শহরের তীরে অবস্থিত।
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ বুড়িগঙ্গা নদী কোন নদীর তীরে অবস্থিত ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে পুরনো ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদী সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে রয়েছে তথ্যবহুল পর্যালোচনা, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশা মানুষদের গবেষণাধর্মী লেখাগুলো প্রকাশিত করা হয়।
বুড়িগঙ্গা নদীর উৎপত্তি ও অবস্থান
বুড়িগঙ্গা নদী একসময় গঙ্গা নদীর একটি অংশ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ফলে এটি মূল গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ধলেশ্বরী নদীর শাখা নদী হিসেবে প্রবাহিত হতে শুরু করে। বর্তমানে এটি ঢাকা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি প্রধান নদী।
নদীর উৎপত্তি ও সংযোগ:
বুড়িগঙ্গা নদী ধলেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদী।
এটি ঢাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কেরানীগঞ্জের কাছে পুনরায় ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
সদরঘাট, বাদামতলী, শ্যামবাজার, কামরাঙ্গীরচরসহ পুরান ঢাকার অনেক অংশ এই নদীর তীরে অবস্থিত।
এছাড়া, নদীটি একসময় ঢাকার প্রধান নৌপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং এখনও এটি গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর হিসেবে কাজ করছে।

ঢাকা শহর ও বুড়িগঙ্গা নদীর সম্পর্ক
বুড়িগঙ্গা নদী ও ঢাকা শহরের সম্পর্ক বহু পুরোনো। একসময় এই নদীর তীরেই মূল শহরটি গড়ে উঠেছিল।
১. ঢাকার গড়ে ওঠার ইতিহাস
মুঘল আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয়।
নদীপথই তখন প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল, তাই বুড়িগঙ্গার তীরে শহর গড়ে ওঠে।
সদরঘাট, বানিজ্যকেন্দ্র ও কেল্লাসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠে।
২. বুড়িগঙ্গার তীরের প্রধান স্থানগুলো
সদরঘাট: বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত নৌবন্দর।
আর্মেনিয়ান গির্জা: বুড়িগঙ্গার তীরে আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ীরা বসবাস করতেন।
লালবাগ কেল্লা: ঐতিহাসিক মুঘল স্থাপনা, যা বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত।
বুড়িগঙ্গা নদীর গুরুত্ব
বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকার অর্থনীতি, যোগাযোগ ও জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।
১. যোগাযোগ ও পরিবহন
একসময় বুড়িগঙ্গা ছিল ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম।
সদরঘাট আজও বাংলাদেশের অন্যতম বড় নৌবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২. বাণিজ্য ও অর্থনীতি
নদীটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী ও কলকারখানা এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে।
৩. কৃষি ও পানি সরবরাহ
অতীতে বুড়িগঙ্গার পানি কৃষিকাজ ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হতো।
বর্তমানে দূষণের কারণে এটি পানযোগ্য নয়, তবে এটি ঢাকার জলবায়ুর ওপর প্রভাব রাখে।
বুড়িগঙ্গা নদীর বর্তমান অবস্থা
দুঃখজনকভাবে, বুড়িগঙ্গা নদী এখন মারাত্মক দূষণের শিকার।
১. পানি দূষণ
শিল্প-কারখানার বর্জ্য, আবাসিক বর্জ্য ও নৌযান থেকে নির্গত তেল নদীর পানিকে দূষিত করেছে।
একসময় যেখানে মাছ ধরা সম্ভব ছিল, সেখানে এখন বিষাক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
২. দখলদারিত্ব
নদীর দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
দখলের ফলে নদীর প্রস্থ সংকুচিত হয়ে গেছে।
৩. পরিবহন সংকট
নৌপরিবহন ব্যবস্থা আগের মতো কার্যকর নেই।
সদরঘাট ও আশপাশের এলাকায় জলযান চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় করণীয়
বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষার জন্য আমাদের কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
১. শিল্প বর্জ্য পরিশোধন
কারখানাগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য শোধনাগার ব্যবহার করতে হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে কড়া আইন প্রয়োগ করতে হবে।
২. দখলমুক্ত করা
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. জনসচেতনতা বৃদ্ধি
সাধারণ মানুষকে নদী সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
বুড়িগঙ্গার পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম চালাতে হবে।
৪. কঠোর আইন প্রয়োগ
দূষণ ও দখল রোধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে।
নদী সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।
বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকা শহরের তীরে অবস্থিত এবং এটি ধলেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদী। একসময় এটি ঢাকার প্রাণ ছিল, কিন্তু এখন চরম দূষণের শিকার হয়েছে। বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হলে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, নাহলে একদিন এই ঐতিহাসিক নদী হারিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিত নদী সংরক্ষণে সচেতন হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে আগামী প্রজন্মও এর সুফল ভোগ করতে পারে।
শেষ কথা
বুড়িগঙ্গা নদী কোন নদীর তীরে অবস্থিত এই বিষয় সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী, বুড়িগঙ্গা নদী বর্তমানে দূষণের কারণে সংকটে পড়েছে। শহরের বর্জ্য, শিল্প কারখানার বর্জ্য এবং পলিথিন দূষণের প্রধান কারণ। তবুও, এই নদী ঢাকার মানুষদের জন্য একটি ঐতিহ্যের প্রতীক,নদীটিকে দূষণমুক্ত করার জন্য সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে আবারও ঢাকার অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।