দেয়াল হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো, এ মহান লেখকের বইটি জীবন বাস্তবতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ‘ দেয়াল হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটি পড়ে আমাদের পারিবারিক সামাজিক জীবন রীতির জন্য যে উপদেশ নামা দেওয়া আছে সেগুলো জেনে আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহজ হবে।
দেয়াল হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ
জনপ্রিয় এই বুড়িগঙ্গা টিভি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ দেয়াল হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ সম্পর্কে অল্প কথায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে,পাঠকের বুক রিভিউটি, এবং লেখককের দূরদর্শী সম্পূর্ণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, বুক রিভিউটি তে তথ্যবহুল আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুক রিভিউ
১৯৭৫ সালে পরপর তিনটি অ*ভ্যু*ত্থানকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে দেয়াল উপন্যাসটি। উপন্যাসের দুটি আখ্যান সমান্তরাল ভাবে চলেছে। প্রথম আখ্যানে দেখানো হয়েছে অবন্তি নামে একটি অসম্ভব রুপবতী ও সমাজের প্রচলন বিরোধী মেয়ে যে কি-না ঢাকায় তার দাদা সরফরাজ খাঁনের সাথে বসবাস করে। অবন্তির বাবা নিরুদ্দেশ ও মা ইসাবেলা স্পেনে থাকায় অবন্তিকে তার দাদার সাথে থাকতে হচ্ছে। অবন্তির বাবা আর্মি অফিসার হওয়ার সুবাদে তাদের বাসায় প্রায়-ই আসতেন মেজর খালেদ মোশারফ এবং কর্নেল তাহের।
যুদ্ধের সময় অবন্তির প্রা*ণনা*শের আশঙ্কায় সরফরাজ আহমেদ তার গ্রামের বাড়ি সোহাগীতে এক পীরের বাড়ী রেখে আসেন তাকে। সেখানে এক পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন ” সামস” এর নজরে পড়ে গেলে ওই পীর অবন্তিকে তার ছেলে জাহাঙ্গীরের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। অবন্তি এ বিয়ে মেনে না নিলেও জাহাঙ্গীরের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে না। রক্ষনশীল সরফরাজ আহমেদ সবসময় ই অবন্তিকে কড়া শাসনে রাখার চেষ্ঠা করেন। তিনি অবন্তির চিঠি আগে খুলে পড়েন, গৃহশিক্ষক শফিক কে সন্দেহের চোখে দেখেন।

উপন্যাসের দ্বিতীয় আখ্যানে দেখানো হয় মেজর ফারুকের বঙ্গবন্ধু হ*ত্যা*র পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে খন্দকার মোশতাক, মেজর রশীদ, মেজর জিয়া, কর্নেল ওসমানী সহ সবার সংশ্লিষ্টতা। এর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন প্রভাষক হুমায়ূন আহমেদের আর্থিক দূরাবস্থা, বাকশালে যোগ দিতে চাপ প্রয়োগ, রক্ষীবাহিনীর অ*ত্যা*চার সহ তৎকালীন সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন তিনি।
অবন্তির শিক্ষক শফিক রাধানাথ নামে এক রহস্যময়ী লোকের সাথে পরিচিত ছিলেন।
তিনি খু*ন হবার আগে তার “আদর্শ লিপি প্রেস” নামে ছাপাখানা ও বিশাল সম্পদ শফিকের নামে লিখে দিয়ে যান। “নীলহাতি” বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী খুঁজতে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয় হয় শফিকের সাথে। শফিকের প্রেসে হুমায়ূন আহমেদের দেখা হয় অবন্তির সাথে।
‘৭৫ এর পট পরিবর্তন ও পরপর সামরিক অ*ভ্যু*ত্থানের গল্প বলে যাওয়ার পাশাপাশি লেখক খালেদ মোশারফ ও কর্নেল তাহেরের সাহসীকতা ও মেজর জিয়ার আর্থিক সততার প্রসংশা করেন। পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরের ফাঁ*সি ও সামরিক আদালতে ১১’শ এর বেশি সৈনিক কে ফাঁ*সিতে ঝুলানোর কথাও উঠে আসে। মেজর ফারুক, রশীদদের চক্রান্ত রুখে দিয়ে ক্ষমতার মনসদে টিকে থাকা মেজর জিয়ার চট্টগ্রামে করুন পরীনতির কথাও দ্রুত বলে যান হুমায়ূন আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলিগ আনোয়ারের সাথে যেদিন কর্নেল তাহেরের সাথে দেখা করার কথা ছিল হুমায়ূন আহমেদের সেদিন-ই ধরা পড়ে যান তাহের! সৌভাগ্য ক্রমে বেঁচে যান হুমায়ূন আহমেদ নয়তো রাষ্ট্র দ্রোহের মামলার বেড়াজালে ফেসে যেতেন তিনি। জাসদের লিফলেট ছাপানোর অপরাধে শফিক কে গ্রেফতার হতে হয় এবং তাহের পরিবারের সাথে পরিচয় থাকায় তাকে রাজস্বাক্ষী হওয়ার জন্য নির্যাতন করা হয়। নিজেকে ভীতু বলে পরিচয় দেওয়া শফিক রাজস্বাক্ষী না হয়ে সাহসীকতার পরিচয় দেন যেমনটা বঙ্গবন্ধু কে হ*ত্যা*র পর রাজপথে একা মিছিল বের করে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
অবন্তীর সাথে সেনা অফিসার ও শফিকের সম্পর্ক আবার শফিকের সাথে হুমায়ূন আহমেদ ও তাহের পরিবারের সম্পর্ক উপন্যাসের দুটি আখ্যান কে সম্পর্কযুক্ত করেছে। ইতিহাস কেন্দ্রিক উপন্যাস হলেও নিজের কথার জাদুতে পাঠকদের বেঁধে রাখতে ভুলেন নি হুমায়ূন আহমেদ।
যেমন:
“এই পৃথীবিতে মূল্যবান শুধু মানুষের জীবন, আর সবই মূল্যহীন।”
“কিছু বিদ্যা মানুষের ভেতরে থাকে, সে নিজেও তা জানে না।”
“যে লাঠি দিয়ে অন্ধ মানুষ পথ চলে, সেই লাঠি দিয়ে মানুষ ও খু*ন করা যায়।”
“মানবজাতির স্বভাব হচ্ছে সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করে।”
দেশের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত যেকোন বই-ই বির্তকিত হয়েছে। দেয়াল ও তার ব্যতিক্রম নয় এবং বইটি আদালত পর্যন্ত ও গড়িয়েছে। তবুও বইটি বরাবরের মতো পাঠক সমাদৃত হয়েছে। এখনও কেউ “দেয়াল” পড়ে না থাকলে পড়ে ফেলুন। হুমায়ূন স্যার কোন দিন হতাশ করেন নি এবার ও আপনাকে হতাশ হতে হবে না…
( কৃতজ্ঞ =বই পর্যালোচনা,শোয়েব আখতার, বইয়ের নাম:দেয়াল , লেখক:হুমায়ূন আহমেদ)
শেষ কথা
মানুষের জীবনে অনেক উত্থান পতন রয়েছে, এই উত্থান পতন চরিত্রগুলো ‘ দেয়াল হুমায়ূন আহমেদ বুক রিভিউ ‘ বইটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার জীবনবোধগুলো লেখক তার লেখনীতে তুলে ধরেছে, পাঠক তার নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য এই বইয়ের উপদেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।